চলতি বছরের নোবেল পুরুষ্কার ঘোষণা শুরু হয় চিকিৎসাশাস্ত্রে বিজয়ীর নাম ঘোষণার মধ্যে দিয়ে, শেষ হবে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীকে নোবেল ভূষিত করায়। ধারাবাহিক ঘোষণায় আজ শুক্রবার শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে রাশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল ও ইউক্রেনের মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিসের সঙ্গে বেলারুশের মানবাধিকার কর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কিকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তবে এই নিয়েই তীব্র সমালোচনা করেছে বেলারুশ।
শুক্রবার(৭ অক্টোবর) নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার পরপরই এক প্রতিক্রিয়ায় বেলারুশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনাতোলি গ্লেজ এই পুরস্কারের নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, কারাবন্দী মানবাধিকার কর্মীকে এই ধরনের পুরস্কারপ্রদান আলফ্রেড নোবেলকে ‘তার কবরে যন্ত্রণা’ দিচ্ছে। নোবেল পুরস্কারকে গত কয়েক বছরে ‘রাজনীতিকরণ’ করা হয়েছে।
বেলারুশের মানবাধিকার কর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি ১৯৯৬ সালে ভিয়াসনা (বসন্ত) নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ভিয়াসনা ব্যাপক বিস্তৃত মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক বন্দীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত এবং এর প্রতিবাদ করে আসছে অ্যালেসের এই সংস্থা।
নোবেল কমিটি বলেছে, বেলারুশের সরকারি কর্তৃপক্ষ বারবার অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কির কণ্ঠ চেপে ধরার চেষ্টা করেছে। ২০২০ সাল থেকে দেশটির কারাগারে বিনাবিচারে আটক রয়েছেন তিনি। প্রচন্ড ব্যক্তিগত দুর্দশা সত্ত্বেও অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি বেলারুশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এক ইঞ্চিও ছাড় দেননি।
বেলারুশের এই মানবাধিকার কর্মীকে মূলত
অর্থনৈতিক অপরাধের সাথে জড়িত থাকার দায়ে কারাবন্দি করে রাখা হয়।
এ প্রসঙ্গে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিকরা বলেছেন, ২০২০ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রতিবাদ জানানোর কারণে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে অ্যালেসকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী করেছেন।
নিন্দা ও অভিনন্দন বার্তার পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা গেছে বেলারুশের রাজনীতিতে। দেশটির সরকার অ্যালেসের নোবেল জয়ের নিন্দা জানালেও প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সেভেৎলানা তিখানোভস্কায়া ওই মানবাধিকার কর্মীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে অ্যালেসের পাশাপাশে দেশটির সব রাজনৈতিক কারাবন্দীর মুক্তির দাবি তুলেছেন এই প্রতিদ্বন্দ্বী।
শান্তিতে নোবল বিজয়ী বেলারুশের মানবাধিকার কর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি
ক্ষমতাসীনদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নাগরিক সমাজের মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি হয়ে ওঠেছেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে ভূষিত করা হয় রাশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল এবং ইউক্রেনের মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিসকেও।
নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি এই ইস্যুতে জানিয়েছে, নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ীরা তাদের নিজ নিজ দেশে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা অনেক বছর ধরে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষায় প্রচার চালিয়ে আসছে। যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো বিষয়গুলো নথিভুক্ত করার প্রচেষ্টার জন্যও শান্তির এই নোবেলজয়ীরা প্রশংসিত।
নোবল কমিটির ভাষ্য, মানবতাবাদী মূল্যবোধ, সামরিকায়নবিরোধী এবং আইনের শাসনের জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীরা দেশে দেশে আলফ্রেড নোবেলের শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার রূপকল্পকে পুনরুজ্জীবিত এবং সম্মানিত করেছেন
বর্তমান বিশ্বে এটিই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে দাবি পুরুষ্কার কমিটির৷