যুক্তরাষ্ট্রে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণবিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেশটির সরকারকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভল্কার তুর্ক। সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫৬তম অধিবেশনে দেওয়া এক উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন,যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেন নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সম্মান করে এবং জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সামরিক শক্তির পরিবর্তে বেসামরিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা নিশ্চিত করে।
তুর্ক আরও বলেন,আইন প্রয়োগে মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন বেসামরিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব, তখন সামরিক বাহিনী ব্যবহারের কোনো যুক্তিসঙ্গততা নেই। জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার। এটি দমন করার জন্য সেনা মোতায়েন করা হলে সেটি হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের লঙ্ঘন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের এই বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলসে ব্যাপক বিক্ষোভ ঠেকাতে মার্কিন মেরিন সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেন। এই পদক্ষেপকে দেশটির রাজনীতিক, মানবাধিকার কর্মী এবং সাধারণ নাগরিকদের একাংশ ‘বেসামরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ’ এবং ‘গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব আন্দোলন ও প্রতিবাদ চলছে, তার পেছনে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের নানা নীতিমালা এবং সিদ্ধান্তের বিরোধিতা। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেকবারই বিক্ষোভ ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি পুলিশের সহিংসতা, অভিবাসন নীতিমালা এবং প্রেস স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর অবস্থান নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি।
জাতিসংঘের ভাষ্য মতে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ এবং এটি রক্ষা করা প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ভল্কার তুর্ক আরও বলেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার স্বাধীনতা থাকতে হবে। ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ না থাকলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জবাবদিহিহীন হয়ে ওঠে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিকবার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন, অভিবাসন ইস্যু এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে তীব্র বিক্ষোভ দেখা গেছে। প্রতিবারই প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অজুহাতে পুলিশি কিংবা সামরিক হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে আন্তর্জাতিক মহলে দেশটির মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।