বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের মধ্যে যাদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে, তাদের জাতিসংঘ মিশনে না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সম্প্রতি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জাঁ পিয়ের ল্যাক্রোয়ার ঢাকা সফর কেন্দ্র করে এই আহ্বান জানায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই বেসরকারি সংস্থা। সংস্থার পক্ষ থেকে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারিকে বাংলাদেশের বাহিনীগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার অ্যামনেস্টির এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ তিন দশক ধরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যদের পাঠিয়ে আসছে। বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী পাঠায়, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ।
অতীতে বাংলাদেশের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীগুলোর বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিবেচনায় নিলে বিষয়টি উদ্বেগের।
র্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতনসহ নানা খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে বলে এই বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনীতিক, মানবাধিকারকর্মী, ভিন্নমতাবলম্বী ও প্রতিবাদকারীদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল, তখন তারা গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার, মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের হুমকি, ভয় দেখানো ও হয়রানি শুরু করে বলে খবর রয়েছে।
সংস্থাটির বক্তব্য, র্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘের র্যাব সদস্যদের শান্তিরক্ষা মিশনে নেওয়া স্থগিত রাখা উচিত। যতক্ষণ পর্যন্ত মিশনে অংশগ্রহণকারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ততা না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়, সে পর্যন্ত এটা স্থগিত রাখার পক্ষে অ্যামনেস্টি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনসংক্রান্ত বিষয় যাচাই-বাছাই করে জাতিসংঘ। এই যাচাই-বাছাই শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমিত রাখা উচিত হবে না।
সংস্থাটির ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের দায়মুক্তি দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তাঁদের পদোন্নতিও দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষাপ্রধান ল্যাক্রোয়ার আগামী ২৫ জুন জুন বাংলাদেশ সফর করার কথা রয়েছে। এই সফর সামনে রেখে গত ১২ জুন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) পক্ষ থেকেও বিবৃতি দেওয়া হয়।
সেই বিবৃতিতেও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয় যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান জানানো হয়।