ড.মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সবাই শান্তি চাই। সবাই শান্তির জন্য সবকিছু করতে পারি বলে মুখে ফেনা তুলতে রাজি আছি, কিন্তু কোনো উদ্যোগ নিতে রাজি নই। আমরা শান্তির ব্যাপারে কোনো কাজ করি না, শুধু মুখে কথা বলি। আমরা যা কিছু করি, যুদ্ধের জন্য করি। যুদ্ধের জন্য কেন করি? দুনিয়ার প্রত্যেকটা দেশে একটি ওয়ার মিনিস্ট্রি আছে, যেটাকে আমরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলি। আসলে যুদ্ধের প্রস্তুতি হলো ওই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সকালে মালয়েশিয়ার লঙ্কাভিতে আয়োজিত ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ওয়ার, পিস অ্যান্ড ইকোনোমিকস-ফিউচার অব হিউমেন বিয়িংস’ বা ‘যুদ্ধ, শান্তি ও অর্থনীতি-মানব জাতির ভবিষ্যৎ’।
বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে দুদিনের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে ২০২৩’ অনুষ্ঠান। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ আগামীকাল আয়োজনের প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর তার বক্তব্য রাখবেন।
ড. ইউনূস বলেন, শান্তি মন্ত্রণালয় বলে দুনিয়াতে কোনো মন্ত্রণালয় নেই। শান্তি চাইতে হলে তার জন্য কাজ করতে হবে। চিন্তা করতে হবে, ফ্রেমওয়ার্ক বানাতে হবে। সেটা নেই। যেটা দুনিয়ার মুখ্য বিষয়, সেটার জন্য কিছুই নেই।
আলবোখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নতুন নতুন টেকনোলজি আসছে। এই যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির কথা বলছি, তার আগে আমরা মহাজগতের জন্য টেকনোলজি করেছি- এগুলো কোথা থেকে আসছে? সব আসছে ডিফেন্স রিসার্চ থেকে। ডিফেন্স রিসার্চের প্রয়োজনেই আমাদের এদিক-সেদিক যেতে হচ্ছে যে মানুষ মারার জন্য কোন কল-কবজা করতে হবে।
তিনি বলেন, এত নতুন নতুন টেকনোলজি তৈরি হচ্ছে, কারণ টাকা ঢালছে। এটা করছে মানুষ মারার জন্য। এই রিসার্চ, এই প্রতিষ্ঠান, এই গবেষণা, মানুষ ডাকা- এর কোনোটাই শান্তির জন্য নেই।
ড. ইউনূস বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে, শান্তি তো আর মুখের কথায় আসবে না। টাকা-পয়সা লাগবে, তার জন্য একটা বাজেট দরকার। মারার জন্য বিরাট বাজেট করেছেন, কিন্তু শান্তির জন্য করেননি। অথচ মারারটা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যে সেটা শান্তির জন্য করছেন। যুদ্ধ করছেন কিজন্য, শান্তি আনার জন্য। অদ্ভুত কথা। যুদ্ধ করে শান্তি আনা যায় নাকি?
অনুষ্ঠানে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ওয়ার, পিস ও ইকোনমিকসের মধ্যে সম্পর্ক কী এবং ভবিষ্যতে মানুষের কপালে কী আছে? সবকিছুর গোড়া হচ্ছে ইকোনমিকস। যুদ্ধ সৃষ্টি করছে ইকোনমিকস, আবার শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ইকোনমিকসই করতে পারবে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, এ সম্পর্কের মধ্যে গোলকধাঁধা দেখা দেওয়াতেই মানুষের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে গেছে, মানুষ এখন সমাপ্তির পথ ধরে অগ্রসর হচ্ছে- যেখানে তার ইতিরেখা দেখা যাচ্ছে, বেশি দূরে নেই।
ইউনূসের জন্মদিন ২৮ জুন। তিনি জন্মদিন পালন করেন না। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২৭-২৮ জুন ইউনূস সেন্টারের উদ্যোগে উদযাপন করা হয় ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’। প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন দেশে দিবসটির আয়োজন করা হয়। যে দেশে উদযাপন করা হয়, সে দেশের এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকে মূল আয়োজক। সহযোগিতা করে ইউনূস সেন্টার।
এবারের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’র আয়োজক দেশ মালয়েশিয়া। আয়োজনের স্থান লঙ্কাভি। মূল আয়োজনটি করছে ‘আলবোখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ড. ইউনূস। এ বছর কোরবানির ঈদের কারণে জুনের পরিবর্তে ২৭-২৮ জুলাই দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। পৃথিবীর প্রায় ৪০ দেশ থেকে ৭০০ অতিথি এবারের আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছেন। এবারের রেজিস্ট্রেশন ফি ছিল ২৫০ ডলার।
এ আয়োজনে স্পিকার হিসেবে রয়েছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ, কলামিস্ট ও অ্যাক্টিভিস্ট মেরিনা মাহাথির, নারায়ণ হৃদয়ালয়ের চেয়ারম্যান ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী লেমা বোউই, পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হোসে রামোস হোর্টা, ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী মেরিনা সিভাসহ আরও অনেকে।
আয়োজনের ভ্যানু সম্পর্কে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা এবার যেখানে সোশ্যাল বিজনেস ডে পালন করছি, এটা মাহাথির বিন মোহাম্মদের জন্মভূমি। তিনি মনে করেন যে, ‘আমার বাড়িতে আসছেন আপনারা, কাজেই আমি থাকব আপনাদের সঙ্গে’।