যুক্তরাষ্ট্রে সফররত আওয়ামী লীগ নেতা এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমানকে জ্যাকসন হাইটসে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে সাবেক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার জের ধরেই ওই নেতার গ্রামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১৫ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আমকি গ্রামের মিয়া বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে জ্যাকসন হাইটসে হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত বাদল মির্জা (৩৬) আমকি গ্রামের আবু বাহারের ছেলে এবং তিনি সোনাইমুড়ী উপজেলা ও জয়াগ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সক্রিয় নেতা ছিলেন।
এ বিষয়ে জয়াগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আকবর পলাশ গণমাধ্যমকে জানান, বাদল মির্জা ৮-১০ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে যান।
এ হামলা নিয়ে তিনি বলেন, আমি দলীয় সভায় অংশ নিতে সারাদিন সংসদ সদস্য এইচএম ইব্রাহিমের সঙ্গে জেলা শহরে ছিলাম। শুনেছি বাদলের বাড়িতে ছাত্রলীগের কিছু ছেলে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। তবে, ওই সময় বাড়িতে কেউ ছিল না।
স্থানীয়দের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টা চালানোর ঘটনাটি জানার পরপরই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান বাদলের পরিবারের সদস্যরা। আজ সকালে সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের ১০-১৫ জন নেতাকর্মী শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টার প্রতিবাদে বাদলের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই হামলার ৩ মিনিটের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ১০-১৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে এবং এক পর্যায়ে তারা বসত ঘরে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, বাদল দেশে থাকতে জয়াগ ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা ছিল এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সরকার পরিবর্তন হলে জনগণের রোষানলে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে বাদলের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে তার শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেয়। ওই সময় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তারা ককটেল বিস্ফোরণ ও ভাঙচুর করেননি।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষনিক পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি এবং এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি।
চাটখিল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নিত্যানন্দদাস গণমাধ্যমকে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
ঘটনার সূত্রপাত
গত ১২ জুলাই স্থানীয় সময় সন্ধ্যার পর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসের লিটল বাংলাদেশ (৭৩ স্ট্রিট) এলাকায় যান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। তাকে দেখে রাস্তার বিপরীতে থাকা নিউইয়র্ক মহানগর বিএনপি নেতা রাব্বী, সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা বাদল মির্জাসহ কয়েকজন যুবক ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন।
এ ঘটনার একটি ভিডিও পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এক পর্যায়ে ওই যুবকদের সঙ্গে শামীম ওসমানের সমর্থকদের ধাক্কাধাক্কি ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। শামীম ওসমান নিজেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।