যশোরের শার্শায় উপজেলাতে গত ১৫ বছরে ৭৯ জন নারী ও শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে। এসময় ঘটনা আড়াল করতে ধর্ষণ ও বলৎকারের শিকার ৪ জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ৭৯ টি ধর্ষন মামলায় অন্তত আসামী হয়েছেন শতাধিক। তবে সাক্ষীর অভাব আর দুর্বল তদন্ত রিপোর্টে প্রায় সব আসামী জামিনে খালাস পেয়েছেন। এতে বিচার ব্যবস্থার দূর্বলতাকে দায়ী করে নতুন করে ন্যায় বিচার চেয়েছেন ভুক্তভোগীদের পরিবার। তবে পুলিশ বলছে নারী নির্যাতনের ঘটনা রোধে তারা সতর্ক রয়েছেন।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের মত ঘটনা।
পুলিশ তথ্য মতে,২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শার্শা উপজেলায় ৭৯ টি ধর্ষণ মামলার মধ্যে শার্শা উপজেলাধীন শার্শা থানায় ৪৮ টি ও এ উপজেলার অন্তগত বেনাপোল পোর্ট থানায় ৩১ টি মামলা দায়ের হয়।
ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের এসব ঘটনার মধ্যে আলোচিত ছিল, ২০১০ সালে বেনাপোলের গয়ড়া গ্রামের চৌকিদার নবিচ্ছদির মেয়ে কাজল রেখাকে ধর্ষণের পর হত্যা। অভিযোগ ওঠে সম্পতির বিরোধ নিয়ে রেশারেশিতে প্রতিবেশি শওকত মেম্বারের ছেলে অহিদুল ইসলাম ও তার সহযোগী মিয়াদ আলী নেদা কাজল রেখাকে গণধর্ষন করে। পরে ঘটনা ধামা চাপা দিতে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে মরদেহ মাঠে ফেলে দেয়।
ন্যায়বিচার পেতে কাজল রেখার বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। তবে কয়েকদিন বাদেই ধর্ষণকারীদের জীবননাশের হুমকিতে অসহায় বাবাকে সব মামলা তুলে নিতে হয়। মেয়ে হারানোর শোকে ঘটনার পর থেকে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে বাবা-মা। এখন বিচার চান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে।
কাজল রেখার বাবা নবিচ্ছদি জানান, মেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার বিচার তারা পায়নি। মামলা করলেও প্রভাবশালীদের চাপে মামলা তুলে নিতে হয়েছিল। বর্তমান সরকারের কাছে মেয়ে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় বিচার চাই।
কাজল রেখার প্রতিবেশীরা জানান, ওহিদুল ও তার সহযোগীরা ছিল দস্যু প্রকৃতির। প্রভাবশালীদের হয়ে অসহায় মানুষদের সম্পদ দখল করে দেওয়া তাদের কাজ ছিল। কেউ তাদের কাজে বাঁধা প্রদান করলে লুটপাট, ধর্ষণ এবং হত্যার মত ঘটনা ঘটাতে পিছু হটতো না।
আলোচিত আরেকটি ঘটনা ২০১৪ সালের। ওই বছরের ২৭ মে উপজেলার বসতপুর গ্রামের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী সেলিনা খাতুনকে প্রতিবেশি জাকিরও তার চার বন্ধু গণ-ধর্ষনের পর গলা কেটে হত্যা করে। পরে লাশ বস্তায় ভরে খালে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় আসামীরা গ্রেফতার হলেও কয়েক মাসের মাথায় তারা জামিনে ফিরে আসে।
২০১৯ সালের ১২ জুন বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে শাহপরানকে বলৎকার করে মাদ্রাসা শিক্ষা হাফিজুর রহমান। পরে তাকে হত্যা করে৷ এ ঘটনায় তখন আসামী গ্রেফতার হলেও ফিরেছেন জামিনে। একদিকে স্বজন হারানো শোক অন্যদিকে এসব অপরাধীরা ফিরে এসে চোখের সামনে ঘুরে বেড়ানো আরো যন্ত্রণা দিচ্ছে স্বজনদের।
শাহপরানের বাবা জানান, বাবা-মার স্বপ্ন পুরনের আগেই লালশার শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছে সন্তানকে । টাকা দিতে পারেনি বলে বিচার পক্ষে আসেনি।
আর ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই শার্শার স্বরূপদাহ গ্রামের কোরবান আলীর মেয়ে মাদ্রাসা ছাত্রী আর্জিনা খাতুনকে ধর্ষনের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছিল।
মানবাধীকার সংস্থা রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষনো মন্ডোল জানান, বিচারহীনতার কারণে দেশে হত্যা, ধর্ষণের মত ঘটনা বেড়ে চলেছে।
তিনি বলেন, প্রভাবশারীদের হস্তক্ষেপের কারনে ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। এ অবস্থার অবসান হলে অপরাধ কর্মকান্ড সমাজে কুমবে।
শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহীর জানান, বিগত সরকারের আমলে বিএনপি পরিবারসহ সাধারন মানুষ যারা হত্যা ও ধর্ষনসহ বিভিন্ন ভাবে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন তাদের আইনী সহয়তা দিতে সব সময় পাশে থাকবে তার দল।
যশোর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম সিদ্দীকি জানান, ভুক্তভোগী পরিবার যে কোন সময় আইনী সহয়তা নিতে পারে। মামলার পর পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে তবে ধর্ষণের মত ঘটনা এড়াতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতন মুলক কাজও করে যাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা।