ফেনীর জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জয়নাল হাজারী কলেজে। রাজনীতি-মুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবেই জেলায় কলেজটির ঐতিহ্য রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ক্যাম্পাসে হঠাৎ-ই ছাত্ররাজনীতি চালুর উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও অধ্যক্ষ বরাবর লিখিতভাবে ক্যাম্পাসে সকল প্রকার দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন।
লিখিত দাবিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে জয়নাল হাজারী কলেজে শান্তিপূর্ণ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছিল। কিন্তু সম্প্রতি কিছু রাজনৈতিক সংগঠন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে এবং কমিটি ঘোষণার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর ফলে কলেজের নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তারা চার দফা দাবি তুলে ধরেন-
১. কলেজের অফিসিয়াল প্যাডে বিবৃতি দিয়ে গোপন ও প্রকাশ্য সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
২. ১১ আগস্টের ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩. ঘটনার বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সংশয় দূর করতে হবে।
৪. আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে, নচেৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হলো।
১৯৯৩ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনীতি-মুক্ত কলেজ হিসেবেই এটি পরিচিত। গত ১১ আগস্ট জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রার্থিতা ফরম বিতরণের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এ ঘটনায় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘আমাদের কলেজে রাজনীতি ছিল না বলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তিদায়ক অবস্থা বিরাজ করত। কিন্তু দীর্ঘ ৩২ বছর পর রাজনীতি চালুর চেষ্টা আমরা মেনে নেব না। আমরা চাই এ কলেজটি শিক্ষার্থী-বান্ধব ও অরাজনৈতিক পরিবেশে চলুক। রাজনীতি বন্ধের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসুচিতে প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেন।’
রাজনীতি বন্ধের দাবি তুলে কলেজের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার জানান,’ফেনী জেলায় একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাজারী কলেজ যেখানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে ভর্তি করিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারতেন যে, ওনার সন্তান মাদকতা, মারামারি, অশ্লীলতার সাথে জড়াবে না। আমারা প্রাক্তনরা বেঁচে থাকতে আমাদের প্রাণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছোট ভাই-বোনদের ভবিষ্যৎ এভাবে নষ্ট হতে দিবো না। কলেজ থেকে রাজনীতির নামে প্রভাব দেখানো কীট-পতঙ্গ গুলোকে মুক্ত করে জয়নাল হাজারী কলেজকে আবারো ১০০% ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করতে হবে।’
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘এ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তারা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির কথা জানিয়েছিল। পরে শুনেছি ছাত্রদল সদস্য ফরম বিতরণ করেছে। ইতিমধ্যে আমরা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছি। গভর্নিং বডির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করতে পারব বলে আশা করছি। আমরা কলেজটি রাজনীতি-মুক্ত রাখতে সচেষ্ট থাকব।’