চাঁপাইনবাবগঞ্জের কালেক্টরেট গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রোকসানা আহমেদের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কষ্টকর পরিবেশে ক্লাস নেওয়ার বাধ্যবাধকতা এবং ছাত্রীদের বোরখা-হিজাব পরায় আপত্তির অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষে চারদিকে ফ্যান থাকলেও শিক্ষকের মাথার উপর থেকে ফ্যান খুলে রাখা হয়। পাশাপাশি শিক্ষকদের বসে ক্লাস নেওয়ার সুযোগ না দিতে সরিয়ে নেওয়া হয় চেয়ার। শিক্ষকদের দাবি, ক্লাসকে আরও ‘কার্যকরী’ করার নামে এই পদক্ষেপগুলো বর্বরতার শামিল।
রোকসানা আহমেদের প্রাথমিক শাখার বেতন মাধ্যমিকের শিক্ষকদের তুলনায় কম ছিল, যা তার পদ অনুসারে হওয়া উচিত ছিল না। ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রক্রিয়াও বিধি অনুসারে হয়নি, যা তাকে ওই পদে থাকার অযোগ্য প্রমাণ করে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
এই নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে প্রাথমিক শাখার দুইজন সিনিয়র শিক্ষক আদালতে মামলা করেন। মামলা চলাকালে তারা অবসরে যান, তবে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। শিক্ষকদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে রোকসানা আহমেদ স্কুলের তহবিল থেকে মামলার খরচ পরিশোধ করে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করেন।
মামলা চলাকালীন বিদ্যালয় প্রায় এক মাস প্রধান শিক্ষকবিহীন ছিল। তৎকালীন জেলা প্রশাসক সিনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের বোর্ড রেজিস্ট্রেশনে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরের স্থলে অফিস সহকারী স্বাক্ষর করেন, যা আইনের লঙ্ঘন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তদন্ত কমিটি কাজ করছে এবং সুষ্ঠু তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন গত ২১ আগস্ট স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া রোকসানা আহমেদ। তিনি দাবি করেন, ষড়যন্ত্র করে তাকে জোরপূর্বক অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে ফ্যান ও চেয়ার সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “বেশিরভাগ ক্লাসরুমে ফ্যান লাগানোর সুযোগ ছিল না, এখন হুক লাগিয়ে ফ্যান দেওয়া হয়েছে কিনা জানি না।”
তদন্ত কমিটির প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন জানান, তদন্ত শেষ হয়েছে এবং শিগগিরই জেলা প্রশাসনের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। সরেজমিন তদন্তে যা পাওয়া গেছে, সেটিই প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকবে, এবং জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।