রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাতে দুই দফা সংঘর্ষ হয় দুইজন আহত হয়েছেন। শ্রেণিকক্ষে সিনিয়রকে জুনিয়রের উত্যক্ত এবং পূর্বশত্রুতার পৃথক আরেকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইদফা সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে। ঢাকা আঞ্চলিক গ্রুপ ও উত্তরাঞ্চল গ্রুপের মধ্যকার এ দুই ঘটনায় আহত দুইজন ঢাকা আঞ্চলিক গ্রুপের সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
আহতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত ও মোজাম্মেল মৃধা নোবেল। তারা ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসা নেন।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ৯টায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা হল সংলগ্ন এলাকায় অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন (এএসভিএম) অনুষদের ৭৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত ও ৭৬তম ব্যাচের রবিউল ইসলামের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এ সময় রবিউল ইসলাম মারধরের শিকার হন। এরপর রবিউল তার বন্ধু, বড় ও ছোট ভাইদের নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করলে আরাফাত আহত হন।
এ পর্যায়ে প্রক্টরিয়াল বডি ও নবাব সিরাজউদ্দৌলা হল প্রশাসনের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত করতে উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসলে বাইরে আবারও সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় ঢাকা আঞ্চলিক গ্রুপের মোজাম্মেল মৃধা নোবেল নামের এক শিক্ষার্থী মাথায় গুরুতর আঘাত পান।
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘৭৭তম ব্যাচের তোফায়েল আহমেদ ও ৭৮তম ব্যাচের আরাফাত আমাকে দেখে সবসময়ই উপহাস করে। ছয় মাস ধরে এভাবে বিরক্ত করছে। কারণ অনেক আগে আমি এবং তোফায়েল মাদকাসক্ত ছিলাম। এখন আমি সম্পূর্ণরূপে মাদক থেকে দূরে আছি। কিন্তু সে (তোফায়েল) এখনও মাঝে মাঝে মাদক গ্রহণ করে ক্লাসে আসে। বরাবরই সে আমাকে উত্যক্ত করে।
তিনি বলেন, এ বিষয়টি ডিন ম্যাডামসহ বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছিলাম। আজকে ম্যাসেজিং-এর মাধ্যমে আমি গালি দিলে আরাফাত আমাকে মারধর করে। পরে আমি ওকে (আরাফাত) মারি।
ইয়াসির আরাফাত সাংবাদিকদের বলেন, রবিউল ৭৬তম ব্যাচের হলেও আমাদের সঙ্গে ক্লাস করে। কিন্তু আমার সঙ্গে গত এক বছর কোনো কথা হয় না। সে তার মতো ক্লাস করে চলে, আমি আমার মতো। কিন্তু আকস্মিক মঙ্গলবার দুপুরে আমাকে ফোন দেয় কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় ফোনে বাজে ভাষায় মেসেজ করে। পরে ক্যাম্পাসের চাতালে আমার সঙ্গে দেখা হলে কথা বিনিময় হয়।
তিনি বলেন, সে তার জীবন ধ্বংসের জন্য আমি দায়ী এমন কথা বলে, যার কারণ আমি জানি না। পরবর্তীতে ৬০-৭০ জন ছেলে মিলে আমাকে ধাওয়া দেয় এবং মারধর করে। এই ঘটনার কারণ আমি জানি না। তবে আমার সঙ্গে যখন কথা বলছিল তখন মনে হয়েছে সে মাদকাসক্ত ছিল।
এদিকে আহত মোজাম্মেল মৃধা নোবেল বলেন, কয়েক মাস আগে ৭৮তম ব্যাচের আহসান কবির আমার ক্যামেরার মেমোরি কার্ড খুলে নেয়। তারপর ওটা ফেরত চাইলে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে স্বীকার করে। কিন্তু ফেরত দিতে কালক্ষেপণ করায় এবং বেশ কয়েকমাস পার হয়ে যাওয়ায় একদিন আমার সাথে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এ ঘটনার অনেকদিন পার হয়ে গেলেও আজ হঠাৎ আমাকে আবার আক্রমণ করে এবং বাঁশ দিয়ে পায়ে, পিঠে, হাতে ও মাথায় আঘাত করে। মাথা ফেটে যাওয়ায় তিনটি সিলাই করতে হয়েছে।
মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কারও আমি কাওকে মারিনি। আজ যে সংঘর্ষ হয়েছে তা ঢাকা ও উত্তর দুই আঞ্চলিক গ্রুপের। এখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, আহত দুজনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আজ বুধবার দুই পক্ষের স্টেটমেন্ট নিয়ে পরবর্তীতে তদন্ত অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।