বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আবার তারা (সরকার) জোড়েশোরে বলতে শুরু করেছে, আমরা নির্বাচন করব, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করব, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করে একই কথা বলেছেন। এসব মিথ্যা কথা বলে, প্রতারণা করে, খালি মাঠে যাকে বলি ওয়াক ওভার নিয়ে আবারও সরকার গঠন করতে চায়।
পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে এটা করতে বাধা এসেছে। বলেছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন চলবে না, এবার একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে।’
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে’ সংহতি সমাবেশে ফখরুল এসব কথা বলেন। নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ (একাংশ) এ সমাবেশের আয়োজন করে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ওই নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে না, সম্ভব না। কথা একটাই-এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।’
আজকে একটা ভয়াবহ সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এমন একটি সরকার, যারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও ছলচাতুরি করে দুটি নির্বাচনে কোনো ভোটারের উপস্থিতি ছাড়াই নিজেদের জয়ী ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে আছে। আবার ২০২৪ সালে যে নির্বাচন হবে, সেখানেও আবার একই কায়দায় তারা নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তার কথায় নির্বাচনে গিয়েছিলাম। তিনি জাতির সামনে ওয়াদা করেছিলেন, নির্বাচনে যারা আসবে, তাদের সমান সুযোগ দেওয়া হবে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হবে, সিডিউল ঘোষণার পর কাউকে গ্রেফতার করা হবে না, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণসহ পৃথিবী দেখেছে সেই নির্বাচন ভোটের আগের রাতে হয়ে গেছে।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বলেন খেলা হবে। খেলবেন কী, কার সঙ্গে খেলবেন? যার সঙ্গে খেলবেন তাদের তো সবাইকে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। পেছনে তাকিয়ে দেখেন গত ১৫ বছরে বিরোধী দলের বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ৪৫ লাখ নেতাকর্মীরা বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, ছয়শ অধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছেন, হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেছেন।’
তিনি বলেন, পত্রিকায় এসেছে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে যত মামলা- যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরবের বিরুদ্ধে সাড়ে ৪শ, যুবদলের বর্তমান সভাপতি সালাহ উদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ৩শ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে দেড়শ, সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। এমনকি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা, আমার বিরুদ্ধে আছে ৯৮টি মামলা, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সব নেতাদের বিরুদ্ধে একই রকম মামলা।
এত বছর এই মামলাগুলো ফেলে রেখেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে অতিদ্রুত এ মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে সাজা দিতে বিশেষ সেল তৈরি করা হয়েছে। তারা নির্দেশ দিয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকদের দ্রুত মামলাগুলোর বিচার শেষ কর। দুই মাসের মধ্যে শেষ কর। পুলিশকে বলেছে, যেগুলো চার্জশিট হয়নি, সেগুলোর অতিদ্রুত চার্জশিট কর। এটার নাম হচ্ছে তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন।
দেশের সব রাজনৈতিক দল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঐক্য গঠন করেছি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরিষ্কার করে সরকারের কাছে এক দফা জানিয়েছি, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, বশংবদ চাটুকার নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তাদের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে।’
খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দেশনেত্রীকে হত্যার উদ্দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তারা এমন কথা বলছে যা মুখে আনা যায় না, অশালীন ও অরুচিকর কথা। আপনি যে তার মৃত্যু চান, তাকে হত্যা করতে চান -এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে আপনার বক্তব্যে। বাঁচানোর মালিক আল্লাহ। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এবার আপনাকেও গুনতে হবে। আপনি কতদিন টিকে থাকবেন এই ক্ষমতায়। জনগণ আপনাকে টেনে হিঁচড়ে নামাবে।’
গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরের সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, রিপাবলিকান পার্টির কেএম আবু হানিফ, গণঅধিকার পরিষদের মুহাম্মদ রাশেদ খান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আবদুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের আরিফুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।