ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মন্তব্যকে সন্দেহজনক বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, একজন শাসক যখন পালিয়ে যায়, তখন তার পদত্যাগপত্র গুরুত্বপূর্ণ না। রাষ্ট্রপতি যখন পদত্যাগের বিষয় নিশ্চিত করেন তখন কোনো কথা থাকে না। এ প্রসঙ্গে নতুন করে আলোচনা সন্দেহজনক ও দুশ্চিন্তার।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ৩১ দফায় সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ আছে। কিছু রাজনৈতিক দল সংখ্যানুপাতে আসন বণ্টনের কথা বলছে, আগে বলে নাই। এটি সব রাজনৈতিক দলের আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তের বিষয়। ভারত ইংল্যান্ডেও সংখ্যানুপাতের উদাহরণ নেই। সংখ্যানুপাতের সমস্যা মোকাবিলা করছে নেপাল। যেসব দল সংখ্যানুপাতের ভিত্তিতে আসন বণ্টন চায় তাদের অনেকের নির্বাচনে আসন পাওয়ারও সম্ভাবনা নাই।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে নতুন পরিস্থিতি এসেছে সেখানে ভালো কিছু করতে গিয়ে জন-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যেনো না যায় তা খেয়াল রাখতে হবে। কোন ব্যক্তি গোষ্ঠীর বিশেষ চিন্তা বাস্তবায়ন করা উচিত হবে না। চাপিয়ে দেয়া যাবে না।
এ সময় তিনি দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করা দেশ দখল হয়ে গিয়েছিলো। ষড়যন্ত্র থেমে নেই, নানান ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। সরকার সবল না, সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। সমাজের বিভিন্নস্থানে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চলছে। দুর্গাপূজায়ও বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা হয়েছিলো। তা মোকাবিলা করা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, দেশের মূল জায়গাগুলোতে এখনো ফ্যাসিস্টের দোসররা বসে আছে জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে তারা উঠে আসার চেষ্টা করছে।
দেশের শাসন কাজ পরিচালনা করতে অন্তর্বর্তী সরকার বাধার শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তত করতে হবে। আমরা চাই না এই সরকার ব্যর্থ হোক।
রাষ্ট্রপতিকে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর অভিহিত করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্য কি? তিনি তো ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। তাদের শপথ বলে কিছু নেই, তাদের শপথ হলো দুর্নীতি অনিয়মের শপথ।
সভাপতির বক্তব্যে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা সরাতে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে সহায়তাকারী ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির আসনে থাকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সাদা কাগজে সই করে ইসলামী ব্যাংক থেকে শেখ হাসিনাকে ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচারে সহায়তা করেছেন যিনি, তিনি এখনো রাষ্ট্রপতির আসনে বসে আছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, খুন, গুমের অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে। তারপর তারা রাজনীতির সুযোগ পাবে, কি পাবে না তা বিবেচনা করতে হবে। তার আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন জানিপপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, এনপিপির চেয়ারম্যান ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইউসুফ আলী, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম, ইউরোপ লেবার পার্টির সমন্বয়কারী রাকেশ রহমান, আবদুর রহমান খোকন, মোহাম্মদ রুম্মান সিকদার, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, খুলনা মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ একেএম সাইফুদ্দোহা, রাজশাহী মহানগর সভাপতি ডক্টর জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মহিলা সম্পাদিকা নাসিমা নাজনিন সরকার, প্রচার সম্পাদক মনির হোসেন খান, দফতর সম্পাদক মো.মিরাজ খান, কেন্দ্রীয় সদস্য মাজহারুল ইসলাম, ছাত্র মিশন কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মো. মিলন, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম মামুন প্রমুখ।