জাবি প্রতিনিধি: গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুধু ফ্যাসিস্ট নয় বরং চোর ও ডাকাত বলে অভিহিত করেছেন নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির অন্যতম সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদুর রহমান।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে ‘গণঅভ্যুত্থানের সরকার, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ফ্যাসিবাদী বলি তাহলে শেখ হাসিনাকে সম্মান করা হয়। হাসিনা যা করেছে তা ফ্যাসিস্টরাও করে না। এগুলো করে ক্রিমিনালরা (অপরাধীরা)। হাসিনা মূলত ক্রিমিনাল, মাফিয়া ও ডাকাত ছিল। কিছুক্ষেত্রে আমরা তাকে পাড়ার মাস্তান বলতে পারি।’
সম্প্রতি শেখ হাসিনার পতনকে গণঅভ্যুত্থান দাবি করে সংবিধান পুনর্লিখন করার বিরোধিতা করেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন জাবি শাখার আয়োজনে এ সংলাপে অন্তবর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, এখন বিভিন্ন জায়গায় কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না। আপনি যখন আওয়ামী লীগকে একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল বলছেন তখন প্রশ্ন আসে ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক কাঠামোতে কীভাবে রাজনীতি করতে পারে? যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে তাহলে গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের সাথে প্রতারণা করা হবে। আমাদের জীবন থাকতে তা হতে দেওয়া হবে না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর অন্তবর্তীকালীন নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর অন্তবর্তীকালীন সরকার এক নয়। এক এগারোর তত্ত্বাবাধয়ক সরকার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছিল। তাদেরকে ফ্যাসিস্ট বানানোর সুযোগ করে দিয়েছিল’ যোগ করেন তিনি।রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকাকে সাংবিধানিক নয় বরং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এই মুহুর্তে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ণ ফরজে আইন হয়ে গেছে। পুরনো সংবিধান বাতিল করার জন্য সংবিধানের ৭ (বি) অনুচ্ছেদ যথেষ্ট।’ নতুন সংবিধান লেখার জন্য রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বাঁধা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের পক্ষে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আরিফ সোহেল। মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতে পালিয়ে থাকা অনেক নেতা দেশে ফিরে সংবিধান প্রনয়ণে অংশ নেন। কিন্তু তারা বাংলাদেশের নয় বরং পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য উপযুক্ত ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। ‘সংবিধান বাতিলের এটাও একটা কারণ যে, আওয়ামী লীগ জনগণের কনসেনশাস নিয়ে এ সংবিধান প্রণয়ন করেনি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান সংস্কার প্রক্রিয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘এবার না হলে আর সম্ভব নয়। তবে এ সংস্কার প্রক্রিয়ার ম‚ল ফল হবে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণম‚লক নির্বাচন আয়োজন।’
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান রাষ্ট্রের সংস্কারের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার করা হবে বলে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মুশফিকুস সালেহীনের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব প্রমুখ।