ইউরোপিয় ফুটবলের মৌসুম শেষের দিকে– চূড়ান্ত হয়েছে কোনো কোনো টুর্নামেন্টের জয়ীর নাম। তবে প্রশ্ন ছিল এক জায়গায়– কে হবেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুটের মালিক? ইউরোপের ফুটবলের লড়াইয়ে গোল্ডেন বুট জয়ের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত ছিলেন তিন ফুটবলার–ভিক্টর গিয়োকেরেস, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও মোহাম্মদ সালাহ্।
শেষ মুহূর্তে লড়াই জমে উঠলেও সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভিক্টর ইয়োকেরেস ও মোহাম্মদ সালাহকে পেছনে ফেলে গোল্ডেন বুট জোড়া জিতে নিয়েছেন–ফরাসি ও মাদ্রিদ স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে। পরশু রাতে মৌসুমের শেষ ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জোড়া গোল করে নিজেকে প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান এই ফরাসি স্ট্রাইকার। শেষ দিকে সালাহ লড়াইয়ের একটু সম্ভবনা যা জাগিয়েছিলেন– কিন্তু শেষমেশ এমবাপ্পের সঙ্গে পেরে ওঠেননি।
এদিকে রিয়াল মাদ্রিদের তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জিতলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাঁর আগে জিতেছিলেন হুগো সানচেজ ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
প্রতি মৌসুমেই ইউরোপিয় শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি গোল করেন, তাঁকে দেওয়া হয় এই বুট জোড়া।
এছাড়া ইউরোপের সব লিগই আলাদা করে মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে গোল্ডেন বুট পুরস্কার দেওয়ার চাল রয়েছে। তবে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট তাঁকেই দেওয়া হয়, যিনি পুরো ইউরোপে সব লিগ মিলিয়ে গোলের জন্য সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পান। পয়েন্ট হিসাব করা হয় গোলসংখ্যা ও সংশ্লিষ্ট লিগের মানের ওপর ভিত্তি করে।
এমবাপ্পে লা লিগায় নিজের অভিষেক মৌসুমেই করেছেন ৩১ গোল। নতুন নিয়ম অনুযায়ী উয়েফা কো–এফিসিয়েন্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ পাঁচ লিগে করা প্রতিটি গোলকে ২ দিয়ে গুণ করে পয়েন্ট দেওয়া হয়। আর লা লিগা ইউরোপিয়ান লিগের র্যাঙ্কিংয়ের তিনে রয়েছে, সেহিসাবে এমবাপ্পে ৩১ গোলের দ্বিগুণ ৬২ পয়েন্ট পেয়েছেন।
এদিকে স্পোর্টিং সিপিতে ভিক্টর ইয়োকেরেস ৫৮.৫ পয়েন্ট নিয়ে হয়েছেন দ্বিতীয়। তবে সুইডেনের এই স্ট্রাইকার এবারের পর্তুগিজ লিগে করেছেন ৩৯ গোল, যা এমবাপ্পের চেয়ে ৮টি বেশি।
এরপরও এমবাপ্পের চেয়ে পেছনে থাকার কারণ পর্তুগিজ লিগ– যা উয়েফা কো-এফিসিয়েন্ট র্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বরে অবস্থিত। আর ৬ থেকে ২২ র্যাঙ্কের লিগের গোলগুলোকে ১.৫ দিয়ে গুণ করা হয়। সেই হিসাবে ইয়োকেরেসের পয়েন্ট ৫৮.৫।
এছাড়া লিভারপুলের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতা মোহাম্মদ সালাহ হয়েছেন তৃতীয় । মিসরীয় এই তারকা এবারের লিগে ২৯ গোল করে পেয়েছেন ৫৮ পয়েন্ট। তাঁর দলের শেষ ম্যাচটি হয়েছে গত রাতে– অ্যানফিল্ডে ক্রিস্টাল প্যালেসের সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। দলের একমাত্র গোলটি করেছেন সালাহ ।
তবে এমবাপ্পেকে টপকে গোল্ডেন বুট জিততে হলে কাল কমপক্ষে ৪ গোল করতে হতো মোহাম্মদ সালাহকে। হ্যাটট্রিক করতে পারলে এমবাপ্পের সমান ৬২ পয়েন্ট হতো এই মিশরীয় স্ট্রাইকারের। সে ক্ষেত্রেও বুট জোড়া জিততেন এমবাপ্পেই।
কারণ– নিয়ম অনুযায়ী একাধিক খেলোয়াড়ের পয়েন্ট সমান হলে যিনি কম সময় খেলেছেন, তিনিই পুরস্কারটি জিতবেন। এমবাপ্পে লা লিগার এবারের মৌসুমে খেলেছেন ২৯১২ মিনিট, সালাহ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত খেলেছেন মোট ৩৩৭৭ মিনিট। তাই এমবাপ্পেকে টপকে গোল্ডেন বুট জিততে হলে সালাহর হাতে ‘অপশন’ ছিল একটাই—ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ৪ গোল করা। কিন্তু সেটি তার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।
উল্লেখ্য,পেশাদার ক্যারিয়ারে সালাহ এক ম্যাচে ৪ গোল করেছিলেন দুবার—২০১৮ সালে লিভারপুলের হয়ে এবং ২০২৩ সালে জাতীয় দল মিসরের হয়ে। তবে কাল ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে সেটির পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।