বাঙালির জাতীয় জীবনে এক ভয়াবহ শোকের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে জন্ম নেওয়া বাঙালি জাতি হারিয়েছিল জাতির জনক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, সপরিবারে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়৷ পরিবারের ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলও রেহাই পায়নি সেই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের রাতে।
বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়-স্বজনদেরও হত্যা করা হয় খুঁজে খুঁজে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে তো বটেই, গোটা বিশ্বে এ এক নজিরবিহীন ঘটনা। আজ মঙ্গলবার শোকাবহ আগস্ট মাস শুরু হয়েছে।
সেই শোকের রাতে স্বাধীন বাংলাদেশে কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য বঙ্গবন্ধুসহ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল, বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার সহধর্মিণী আরজু মণি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়কে হত্যা করে।
আগস্টের বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে দীর্ঘ ২১ বছর।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে শুরু হয় বিচারিক প্রক্রিয়া। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। বিচার শেষে ২০১০ সালে কার্যকর করা হয় ঘাতকদের ফাঁসির রায়। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়।
২০০৪ সালে আরেক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের চেষ্টা চালানো হয়েছিল, শোকের মাস আগস্টেই বঙ্গবন্ধুকন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই বছরের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শান্তি সমাবেশে তার ওপর গ্রেনেড হামলা করা হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।
সেদিন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং ৫ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।
আগস্ট মাসকে প্রতি বছরই শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
এবার ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করবে আওয়ামী লীগ।
জুলাই মাসের শেষদিন গতকাল সোমবার দলটির দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছে। ৩১ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে আলোর মিছিলের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
একই সময়ে ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করবে মৎস্যজীবী লীগ এবং বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ বা মানববন্ধন করবে যুবলীগ।