এস.এম. শাহরীয়ার স্বাধীন, ইবি প্রতিনিধি
সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ‘জাস্টিস ফর সাজিদ আব্দুল্লাহ’ -এর আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়ামোড় এলাকা থেকে একটি মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।
সাজিদ হত্যার ব্যাখ্যা ও বিচারের দাবিতে সোমবার প্রশাসন ভবন অবরোধের ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ শেষ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীদের ‘বিচার বিচার বিচার চাই সাজিদ হত্যার বিচার চাই’, ‘জুলাই যোদ্ধা কবরে খুনি কেন বাহিরে’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই খুনিদের ফাসি চাই’, ‘ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে প্রশাসন কি করে’, ‘খুনিদের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এ সময় আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন,”পুকুরে সাজিদের লাশ পাওয়ায় পর থেকে প্রশাসন তালবাহানা শুরু করেছে। তারা বলেছিল ২৪ ঘন্টার ভিতরে রিপোর্ট দিবে কিন্তু সেই রিপোর্ট দিয়েছে ৪৮ ঘন্টা পরে। এই তালবাহানা আর মেনে নেওয়া হবে না। আজকে আমরা ফরেনসিক রিপোর্ট পেয়েছি, সেখান দেখা যাচ্ছে সাজিদ আব্দুল্লাহকে রাত তিনটার দিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রশাসনকে বলতে চাই আপনারা হত্যাকারীকে দ্রুত চিহ্নত করে বিচার নিশ্চিত করুন। তা না করতে পারলে ছাত্রজনতা তাদের পথ বেছে নেবে। আমরা যে রিপোর্ট পেয়েছি এটা মেডিকেল থেকে পেয়েছি, এখন আমরা আপনাদের রিপোর্ট দেখতে চাই।”
শাখা ছাত্রদলের সদস্য নুর উদ্দিন বলেন,”খুন হয়েছে আমার ভাই ঘরে থাকার সময় নাই। সাজিদ হত্যা হয়েছে ১৭ জুলাই অথচ এখনো বিচার হয়নি। আমরা চাই পিবিআই সহ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করুন। যদি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সাজিদ হত্যাকারীদের কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন করে দেয়া হবে। সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে দুর্বার আন্দোলনের সাথে শাখা ছাত্রদল ছিলো এবং বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের সাথে মাঠে থাকবে ইনশাআল্লাহ।”
ইবি ছাত্রশিবির নেতা হাসানুল বান্না অলি বলেন, “আজকে সকলে নিশ্চিত হয়েছে সাজিদকে ১৭৫ একরে হত্যা করা হয়েছে। সাজিদকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার নিশ্চিত করুন। যেই হত্যাকারী হোক না কেন ১৭৫ একরে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আর কোনো শিক্ষার্থী যেন হত্যা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা আপনারা সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে যে আন্দোলনের ডাক দিবেন কোনো দল মত না ভেবে আন্দোলন থাকবো। আমরা দেখতে চাই কতবড় কালিজাধারী ব্যক্তি ১৭৫ সাজিদকে হত্যা করেছে।”
জানা গেছে, রোববার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে সাজিদের মৃত্যুর ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এতে উল্লেখ আছে, “মৃত্যুর কারণ হল শ্বাসরোধজনিত শ্বাসকষ্ট (asphyxia), যা মৃত্যুর আগে (antemortem) ঘটেছে এবং এটি হত্যাজনিত (homicidal)। ময়নাতদন্ত (postmortem) করার সময় থেকে আনুমানিক ৩০ ঘণ্টা আগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।” এরপরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ক্যাম্পাসে নানা মহলে সৃষ্টি হয়েছে সন্দেহের। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রশাসন তদন্তে কমিটি গঠন করলেও তদন্ত কমিটির কাজের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট নয় শিক্ষার্থীরা। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়।