সংস্কার এককভাবে সরকারের কোন দায়িত্ব নয়। ঐক্যমতের ভিত্তিতেই এই সংস্কার কাজ সফল করতে হবে” বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। সোমবার (২৬ মে) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছি, কিন্তু একইসঙ্গে এ সময়টি অপার সম্ভাবনাও নিয়ে এসেছে। জাতি হিসেবে আমরা একটি অপশক্তিকে পরাজিত করেছি, এবং এখন সময় এসেছে নতুন এক বন্দোবস্ত গড়ে তোলার। এ প্রেক্ষিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সামনে এসেছে এবং এর বিপুল দায়িত্ব আমাদের কাঁধে এসে পড়েছে। তবে আমরা মনে করি, সংস্কার এককভাবে সরকারের কোন দায়িত্ব নয়। ঐক্যমতের ভিত্তিতেই এই সংস্কার কাজ করতে হবে এবং এই কাজ কতটা কঠিন তা আপনারা ইতোমধ্যে কিছুটা অনুভব করতে পারছেন। তাই আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি, সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ বা গোত্রীয় চিন্তার ঊর্ধ্বে উঠে এসে এই সংস্কার কাজকে সফলভাবে সম্পন্ন করার যেনো সুযোগ করে দিই।
তিনি আরও বলেন, নজরুলের প্রয়োজনীয়তা আমরা বিভিন্ন আন্দোলনের সময় গভীরভাবে অনুভব করেছি। যিনি আমাদের সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছেন, আজকের এই বৃহৎ আয়োজনের প্রেক্ষাপটে তিনি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। তরুণদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা একটি ‘অধিকার-বঞ্চিত’ জাতি থেকে ‘অধিকার-সমৃদ্ধ’ জাতিতে পরিণত হয়েছি। নজরুলের জন্ম আমাদের নতুন এক যুগের ইঙ্গিত দেয়। বিশ্বজুড়ে জ্ঞানের বিপুল ভাণ্ডার রয়েছে, কিন্তু তা মাতৃভাষার সঙ্গে পুরোপুরি সংযোগ ঘটাতে পারিনি। এজন্য আন্তর্জাতিক অনুবাদমূলক ব্যবস্থার প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
“মোরা বন্ধনহীন, জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল”—এই স্লোগানকে ধারণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় দুই দিনব্যাপী নজরুল জয়ন্তী-২০২৫।
সোমবার (২৬ মে) দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বিকেল ৪টায় নজরুল ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে। পরে ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা পর্ব ও নজরুল পদক প্রদান অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, সিন্ডিকেট সদস্য এম জাকির হোসেন খান।
নজরুল পদক প্রদান পর্বে নজরুল সংগীতে অবদানের জন্য ইয়াকুব আলী খান এবং নজরুল গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক ড. রশিদুন নবীকে নজরুল পদক ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, আজকের দিনে, ঐক্য ধরে রাখা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। বিভাজনের রাজনীতি আমাদের খন্ড বিখন্ড করে দিচ্ছে। আমাদের সমাজ ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এখন আমাদের প্রয়োজন ‘হাত ধরে রাখার রাজনীতি’—একটি সহমর্মিতার, সম্মিলনের এবং সহযোগিতার রাজনীতি। এই সংকটকালীন মুহূর্তে, নজরুলই হতে পারেন আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। নজরুলের চর্চাকে কেন্দ্র করে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বিশাল ভূমিকা রাখার সুযোগ। আমরা চাই, এই ঐক্যবদ্ধতার প্রয়াসে আপনাদের পাশে পেতে।
পরে আলোচনা পর্ব শেষে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে পরিবেশিত হয় আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য ও নাটক ‘জিনের বাদশা’। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান নজরুলের জীবন ও দর্শনকে ঘিরে এক গম্ভীর ও হৃদয়গ্রাহী সাংস্কৃতিক আবহ সৃষ্টি করে।