বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাংবাদিক শামসুজ্জামান একজন মানুষের উক্তি, সত্য ঘটনা তুলে ধরেছেন। এটি করে তিনি কী অপরাধটা করেছেন, সেটা বোধগম্য নয়। প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার ঘটনার নিন্দাও জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা ভয়াবহ ঘটনা। ওই সাংবাদিক কী অপরাধটা করেছেন, আমি তো বুঝলাম না! সত্য যে ঘটনা, সেটা তিনি তুলে ধরেছেন। একজন মানুষের যে উক্তি, সে উক্তি তুলে ধরেছেন।
অপরাধটা কী, ২৬ মার্চের দিনেই এটা করাটা? তার মানে স্বাধীনতাকে অপমান করা হয়েছে, মানহানি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একটা মানুষ যদি স্বাধীনতার দিনে ক্ষুধার্ত বোধ করে, সে যদি বঞ্চিত বোধ করে এবং সে যদি ওই কমেন্টটা দেয় যে দেশ স্বাধীন হয়ে আমার কী লাভ হলো। অপরাধটা কোথায়? মির্জা ফখরুল ইসলাম এ সময় ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামের এক স্বরাজ বিপ্লবীর পরিবারের ওপর নির্মিত একটি ছায়াছবির সংলাপ ‘স্বাধীনতা কী ধুয়ে খাব’ উদ্ধৃত করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, যে স্বাধীনতা আমাদের খেতে দেয় না, যে স্বাধীনতা এভাবে মানুষকে নির্যাতন করে, নিপীড়ন করে, হত্যা করে, সে স্বাধীনতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এটাকে খেদোক্তি বলে। তার অর্থ তো এই নয় যে স্বাধীনতাবিরোধী। এখন শামুসুজ্জামান সাহেব রিপোর্ট করেছেন, তার জন্য তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের কথা বলার কারণে যদি সাংবাদিককে হেনস্তা করা হয়, সেটা কি সরকারকে ক্রেডিট দিচ্ছে?
সংবাদ সম্মেলনে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক প্রশ্ন করেন– একটা গণমাধ্যম তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে, অন্য গণমাধ্যম তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। এবার একটু ব্যতিক্রম দেখা গেল। একটা গণমাধ্যম একটা প্রতিবেদন তুলে ধরল, তার বিপরীতে একাধিক গণমাধ্যম পাল্টা প্রতিবেদন করল। এটা গণমাধ্যমের মধ্যে বিভক্তি তুলে ধরার কোনো উদ্দেশ্য কি না?
জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা এটা নতুন নয়, অনেক পুরোনো। সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠানগুলো—প্রেসক্লাবে বলেন, ডিআরইউ বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ভাগ করা হয়েছে।
‘লাভটা কোথায়? লাভটা হচ্ছে; যেসব সংবাদপত্র সত্য কথাগুলো তুলে ধরে, তারা কিছুটা ভয়কে জয় করে কিছুটা তুলে ধরে, এইগুলোকে বিপদগ্রস্ত করে ফেলা’, যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, কিছু কিছু সাংবাদিক আছে, যাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দিয়ে তাদের দিয়ে তাদের পক্ষে কথা বলায়। টক-শো গুলো যে হয়, দেখবেন, এমন এমন লোকদের নিয়ে আসে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে, বিরোধী মতের পক্ষ থেকে, যারা কথাই ঠিকমতো বলতে পারে না— এমনও আছে। এটা কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে, সেভাবেই আনা হয় এবং যারা কথা বলতে পারে, তাদের ডাকা হয় না। একটাই লক্ষ্য যে আমাকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে।
নওগাঁয় র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। স্থায়ী কমিটি মনে করে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একজন নারীকে কোনো সুনির্দিষ্ট মামলা ছাড়া তুলে নেওয়া এবং এর ফলে মৃত্যু আবারও প্রমাণ করেছে, এই সরকারের অধীনে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যথেচ্ছভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই চলেছেন।
নির্বাচন যখন কাছাকাছি আসে, তখন এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যায়। মাঝে কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে বন্ধ ছিল। এখন আবার ঘটছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ওই ধরনের আরও ঘটনার আশঙ্কা করছেন কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি একেবারেই ঠিক বলেছেন। পুরো বিষয়টি হচ্ছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আমরা মনে করি, এই সরকার যেহেতু জনবিচ্ছিন্ন, জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। কিন্তু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের একটা নির্বাচন দেখাতে হবে। সেই নির্বাচনের আগে যাঁরা ভিন্নমত পোষণ করেন, এ ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে তাঁদের ভীতি প্রদর্শন করা, গোটা দেশে একটা ত্রাসের অবস্থা সৃষ্টি করা।’
তিনি বলেন, গতকাল একটি পত্রিকায় দেখলাম যে তারাবিহর সময় নামাজ থেকে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তার মধ্যে দুজন মহিলা ও তিনজন শিশু ছিল। এ ঘটনাগুলো মানুষকে আবার ভয় দেখানোর জন্য করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব জানান, স্থায়ী কমিটির সভায় ইউরোপ ও আমেরিকাপ্রবাসী সাংবাদিকদের দেশে বসবাসকারী নিকট আত্মীয়স্বজনদের ওপর ক্রমাগতভাবে হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
সম্প্রতি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাই মাহিনুর আহমেদ খানকে ১৭ মার্চ কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করার ঘটনায়ও নিন্দা জানানো হয়। সভায় অবিলম্বে সাংবাদিক ও তাঁদের পরিবারের প্রতি ভীতি প্রদর্শন এবং সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।