রাজধানীর মিটফোর্ডে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সামনে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও সারাদেশে চলমান হত্যা, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্রোহী হলের নিচ থেকে প্রতিবাদ মিছিলটি শুরু হয়ে ‘জুলাই ৩৬’ স্কয়ার হয়ে শিউলিমালা হলের সামনে দিয়ে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে থামে এবং বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দেয়। পরবর্তীতে মিছিলটি নজরুল ভাস্কর্য ও লাইব্রেরির সামনে দিয়ে আবার বিদ্রোহী হলের নিকটে এসে প্রতিবাদী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা “সন্ত্রাসীদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও”; “সন্ত্রাসীরা উল্লাস করে, ইন্টারিম কী করে?”; “আমার ভাই মরল কেন? ইন্টারিম জবাব দে”; “খুন ধর্ষণ নিপীড়ন, রুখে ফেলো জনগণ”; “জবাব জবাব জবাব দে, নইলে গদি ছেড়ে দে”; “দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিব রক্ত”; “রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়” সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান।
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে শিক্ষার্থীরা খুন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজিসহ সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান।
আইন ও বিচার বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাজু শেখ বলেন, “সংগ্রামী ছাত্র-জনতা, প্রথমে আপনাদেরকে আমি প্রস্তর যুগে স্বাগত জানাচ্ছি। বিএনপির মাধ্যমে যে প্রস্তর যুগ বাংলাদেশে ফিরে এসেছে, সে যুগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, যখনই সন্ত্রাসী বা চাঁদাবাজ বিএনপি দল থেকে আসে, তাদেরকে বহিষ্কারের নামে এক ধরনের নাটক করা হয়। এই নাটক আর চলতে পারে না।’
তিনি বলেন, ইন্টারিম সরকারকে বলতে চাই, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আপনারা ক্ষমতা নিয়েছেন গাছ লাগানোর জন্য নয়। বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাসকে উৎখাত করার জন্য আপনারা ক্ষমতা নিয়েছেন। এই সন্ত্রাসীদের যদি বিচার না করতে পারেন, সসম্মানে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে চলে যান। আমরা এক ফ্যাসিস্টকে বিদায় করেছি, আর এক ফ্যাসিস্টকে বিদায় করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করবো না। অতি দ্রুত যদি এর বিচার না হয়, আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা লংমার্চ ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য সরকার বলেন, “এই মর্মান্তিক খুন নিয়ে আমাদের প্রতিবাদ সমাবেশ করার দরকার ছিল না, প্রশাসন যদি আগের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতো, বিচার করতো এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাভাবিক রাখতো তাহলে আজকে আমার ভাই মারা যেত না। এটা একটা রাষ্ট্রীয় খুন, এটার দায় অবশ্যই ইন্টারিম সরকারকে নিতে হবে। তারা যদি এটার সুষ্ঠু তদন্ত না করতে পারে, সে বিএনপি হোক বা যে দলেরই হোক সেটা দেখার বিষয় না। এই মর্মান্তিক খুন, এই ট্রমাটাইজ হয়ে যাওয়ার দৃশ্য আমরা আর দেখতে চাই না। আমরা বলতে চাই, এর সুষ্ঠু বিচার করুন এবং এমন দৃষ্টান্ত তৈরি করুন যেন এই রকম খুন করার মানসিকতা কারোরই না হয় সমাজে।”
উল্লেখ্য, গত বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। শুক্রবার (১১ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।