শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫
HomeUncategorizedসরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো কতটা যৌক্তিক

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো কতটা যৌক্তিক

Published on

spot_img

ব্রিটিশ ভারতে ১৮৯৫ সালে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) পরীক্ষায় বসার সর্বনিম্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ২১ বছর। আর সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ২৩ বছর। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাড়তে বাড়তে এখন ৩০ বছরে দাঁড়িয়েছে। তবে কোটার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তা আরও দুই বছর বেশি, মানে ৩২ বছর।

এখন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি উঠছে। কয়েক শ তরুণ গত সোমবার এ দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন। সরকারও বিষয়টি পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করেছে।

প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা যৌক্তিক কি না। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো লোকপ্রশাসনের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, জনপ্রশাসন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সাবেক একজন সচিব ও সরকারি চাকরি আইনে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁদের দুজন ৩৫ বছর করার যৌক্তিকতা নেই বলছেন। একজন বলেছেন, স্থায়ীভাবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা যাবে না। তবে সাময়িক একটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এ-ও বলছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর না করে ৩২ বছর করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও সাধারণ চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে ব্যবধান ঘুচিয়ে দেওয়া যায়। বাংলাদেশে বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে তা ৩২ বছর।

ভারতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাধারণ বয়সসীমা ৩২ বছর। পাকিস্তানে অবশ্য তা ৩০ বছর। বিশেষজ্ঞরা চাকরি বাড়ানোর ওপরও জোর দিচ্ছেন, যাতে তরুণেরা বেকার না থাকেন।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বুধবার সচিবালয়ে বলেছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবির যৌক্তিকতা আছে। তিনি বিভিন্ন দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখনকার বয়স যেটি আছে তা বাড়ানো উচিত। তবে কতটুকু করা যৌক্তিক তা সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে চিন্তা করা হবে।

সাধারণভাবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ হলেও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তর, বিধিবদ্ধ সংস্থায় বিভিন্ন পদে নানা রকম বয়সসীমা আছে। এসব পদ নন-ক্যাডার। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পদ, চিকিৎসক নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশি বয়সেও প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন।

সরকারি চাকরি আইনের বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া

বাংলাদেশে বয়সসীমা

বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সাবেক রেক্টর ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদারের লেখা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস বইয়ের তথ্যানুযায়ী, ব্রিটিশ ভারতের শেষ দিকে আইসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সর্বোচ্চ বয়স ছিল ২৩ বছর। পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এ বয়সসীমা ২৪ বছর নির্ধারিত ছিল। পরে ১৯৬৩ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে বয়সসীমা ছিল ২৫ বছর।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ২৭ বছর নির্ধারণ করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩১ জুন তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপন বলছে, তখন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ৩০ বছর।

বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিটি অনেক বছর ধরেই তোলা হচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হওয়া আওয়ামী সরকার দাবিটি পূরণ করেনি। তবে করোনার সংক্রমণজনিত পরিস্থিতির কারণে সাময়িক ছাড় দেওয়া হয়েছিল। যেমন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি সব চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগে (বিসিএস ছাড়া) প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমায় ৩৯ মাস ছাড় দেয় সরকার।

অবশ্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, সেশনজট, প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি ও অনিয়ম—এগুলো প্রশাসনিক সমস্যা। বয়সসীমা বাড়ানো হলেও এসব সমস্যা থাকবে। এটা দূর করতে পদক্ষেপ দরকার।

সরকারি চাকরি আইনের বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণভাবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ হলেও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তর, বিধিবদ্ধ সংস্থায় বিভিন্ন পদে নানা রকম বয়সসীমা আছে। এসব পদ নন-ক্যাডার। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পদ, চিকিৎসক নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশি বয়সেও প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন।

ফিরোজ মিয়া উদাহরণ দেন যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে ট্রান্সপোর্ট ইকোনমিস্ট ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট পদে বয়স ৪০ বছর হলেও আবেদন করা যায়। বিভিন্ন সংস্থায় এমন বহু পদ রয়েছে। তিনি বলেন, স্থায়ীভাবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা ঠিক হবে না। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বয়সে দুই বছরের ছাড় দেওয়া যেতে পারে।

আন্দোলনকারীদের যুক্তি কী

সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা নানা যুক্তি তুলে ধরছেন। তাঁদের দাবি, ১৬২টি দেশে বয়সসীমা ৩০ বছরের বেশি। তাঁরা করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত, সেশনজটে আক্রান্ত এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে চাকরি পাননি। বিসিএসে দীর্ঘসূত্রতা, দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং ২০১১ সালে সরকারি চাকরির অবসরের সময় বাড়লেও প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়ানোকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন তাঁরা।

সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি চাই—৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ নামের আন্দোলনকারীদের একটি সংগঠনের জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা খাদিজা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, এই আন্দোলন শুরু হয়েছে ২০১২ সাল থেকে। তাদের দাবি মানা হয়নি। তিনি জানান, তিনি রংপুরের সরকারি কারমাইকেল কলেজে পড়েছেন। ২০১৮ সালে স্নাতক শেষ হয়েছে। সেশনজটের কারণে তিনি ৩০ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত চার বছরের মতো সময় সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পেরেছেন।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, আশপাশের দেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ বাংলাদেশে খাটে না। কারণ, ওই সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারি চাকরি ও নিয়োগের ধরনে ভিন্নতা আছে।

Latest articles

লন্ডনে টিউলিপকে বিনামূল্যে ফ্ল্যান দেন আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে লন্ডনে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন আবাসন ব্যবসায়ী...

শাপলা চত্বর নিয়ে সৈয়দ আশরাফকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়: সোহেল তাজ

শাপলা চত্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দোষারোপ...

শাপলা চত্বর নিয়ে সৈয়দ আশরাফকে দোষারোপ ঠিক নয়, বললেন সোহেল তাজ

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ বলেছেন, শাপলা চত্বরের ঘটনায় সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে যেসব দোষারোপ...

বেফাক থেকে আওয়ামী দোসরদের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

এস এম সাইফুল ইসলাম, প্রতিনিধি: কওমী মাদরাসার শিক্ষাবোর্ড 'বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ' থেকে আওয়ামী...

More like this

লন্ডনে টিউলিপকে বিনামূল্যে ফ্ল্যান দেন আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে লন্ডনে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন আবাসন ব্যবসায়ী...

শাপলা চত্বর নিয়ে সৈয়দ আশরাফকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়: সোহেল তাজ

শাপলা চত্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দোষারোপ...

শাপলা চত্বর নিয়ে সৈয়দ আশরাফকে দোষারোপ ঠিক নয়, বললেন সোহেল তাজ

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ বলেছেন, শাপলা চত্বরের ঘটনায় সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে যেসব দোষারোপ...