পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার পানগুছি নদীর কলারন-সন্ন্যাসী ফেরিঘাট ১৮ বছর ধরে অচল পড়ে আছে। এক সময় ব্যস্ততম এ ফেরিঘাটটি ২০০৬ সালে চালু করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। কিন্তু ২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরে ঘাটটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আর সংস্কার করা হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার যাত্রী প্রতিদিন ইঞ্জিনচালিত নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। স্থানীয়রা দ্রুত ফেরিঘাটটি চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিডরে ফেরির পন্টুনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তা কয়েক বছর পড়ে ছিল। পরে মেরামতের জন্য নিয়ে গেলেও আর ফেরত আনা হয়নি। এতে ঘাটটি অচল হয়ে পড়ে। এখন যাত্রীরা ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কিলোমিটার প্রশস্ত ও খরস্রোতা নদীটি পার হতে প্রতিদিনই যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ঢেউ ও স্রোতের কারণে শিশু, নারী ও অসুস্থদের পারাপার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
এছাড়া ফেরিঘাটটি পিরোজপুর থেকে সুন্দরবন, মোংলা, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র নৌপথ হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি। ঘাটটি বন্ধ থাকায় সড়কপথে যাতায়াত করতে হলে ৩৫ কিলোমিটার ঘুরে বাগেরহাটের সাইনবোর্ড হয়ে যেতে হয়, যা সময় ও খরচ বাড়িয়ে দেয়।
পানগুছি নদীর কলারন-সন্ন্যাসী ফেরিঘাট ২০০৬ সালের ৪ আগস্ট চালু হয়। এক বছর পর সিডরে কলারন প্রান্তের ঘাটটি বিধ্বস্ত হলে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর যাত্রীদের জন্য চালু করা হয় ট্রলার সার্ভিস।
তবে দুই পাড়ের ঘাটগুলোও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। যাত্রীদের নামা-ওঠার সময় যেমন ঝুঁকি থাকে, তেমনি মোটরসাইকেল পারাপার করতেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে ঘাট ডুবে গেলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
এলাকাবাসীর দাবি, ঘাটটি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উদ্বোধন করার কারণে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তা আর সংস্কার করেনি আওয়ামী লীগ সরকার।
ইন্দুরকানী উপজেলার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৬ সালে সাঈদী সাহেব ফেরিঘাটটি চালু করেছিলেন। এরপর সিডরে নষ্ট হলেও আর কেউ তা সংস্কার করেনি। তিনি যেহেতু জামায়াতের নেতা ছিলেন, তাই ফেরিঘাটটি নিয়ে রাজনৈতিক কারণে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। অথচ আমাদের জন্য এটি খুব প্রয়োজন। ফেরিঘাট চালু হলে আমাদের অনেক উপকার হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাসান জোমাদ্দার বলেন, নদী পারাপারের জন্য এখন ট্রলারই একমাত্র ভরসা। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে ঢেউয়ের কারণে ট্রলারে যাত্রীদের জন্য পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অসুস্থ রোগী ও শিক্ষার্থীদের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি কষ্টকর।
ট্রলার চালক শাহজাহান মিয়া বলেন, নদীর মোহনার কাছে ঘাটটি হওয়ায় প্রায়ই ঢেউয়ের কারণে ট্রলার চলাচলে সমস্যা হয়। দুই পাড়ে ভালো ঘাট না থাকায় ওঠানামা করতেও কষ্ট হয়। অনেক সময় ভয় লাগলেও ট্রলার চালাতে হয়। এখানে একটি ফেরি খুবই দরকার।
ব্যবসায়ী মিঠু হাওলাদার বলেন, এই ঘাটে মাত্র দুটি ট্রলার চলে, ফলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। পারাপারে বেশি ভাড়া গুনতে হয় এবং মালামাল পরিবহন করাও ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প পথে যেতে হলে ৩৫ কিলোমিটার ঘুরতে হয়, যা সময় ও খরচ বাড়ায়। ফেরিঘাট চালু হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, শিগগিরই এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।
কলারন-সন্ন্যাসী ফেরিঘাটটি চালুর ১৮ বছর পরও সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসী প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্থানীয়রা দ্রুত ফেরি চালুর দাবি জানিয়েছেন। প্রশাসন আশ্বাস দিলেও কবে নাগাদ ফেরিঘাট চালু হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।