নিজ বাসায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যা মামলায় গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ হাইকোর্টকে জানান, এটার তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি মামলার তদন্ত শেষ করতে। কিন্তু আরও কিছু সময় প্রয়োজন। তাদের যেনো ৯ মাস সময় দেওয়া হয়। পরে আদালত ২২ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলেন। অর্থাৎ ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
আদালতে মামলায় বাদীপক্ষের শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। আর রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এক যুগ পর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ৪ নভেম্বর মামলার আগের তদন্ত সংস্থা র্যাবের কাছ থেকে মামলার নথিপত্র বুঝে নিয়েছে পিবিআই। সংস্থাটি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক। তিনি বলেছিলেন, ‘র্যাবের কাছ থেকে মামলাসংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র বুঝে পেয়েছি। তদন্তকাজ নতুন করে শুরু করেছি।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় এই সাংবাদিক দম্পতি নৃশংসভাবে খুন হন। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।
সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে এই মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব।
২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে র্যাব আদালতকে জানিয়েছিল, সাগর-রুনির বাসা থেকে জব্দ করা আলামতের ডিএনএ পর্যালোচনায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই পুরুষের উপস্থিতি মিলেছে। অজ্ঞাতপরিচয় দুই পুরুষকে শনাক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ইনডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসেস (আইএফএস) ল্যাবে ডিএনএ পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ছবি প্রস্তুতির চেষ্টা চলছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএ ল্যাবের ফলাফল জেনেছে র্যাব। তবে অজ্ঞাতপরিচয় দুজনের ডিএনএ থেকে ছবি তৈরির সন্তোষজনক ফল আসেনি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে দুজন জামিনে, বাকি ছয়জন কারাগারে।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সাগর ও রুনি হত্যা মামলার তদন্তে বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।