স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সাদাপোশাকে ডিবি কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। অভিযানের সময় অবশ্যই নির্ধারিত পোশাক পরিধান করতে হবে, পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। আইনের বাইরে কোনো কাজ করতে পারবেন না। আইনের বাইরে আমিও যদি কোনো আদেশ করি, তাঁরা যেন সেটি ফলো না করেন।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে ডিবি কার্যালয়ে আলোচনা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডিবি কার্যালয়ে থাকা ‘আয়নাঘর’ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কিছুটা হাস্যরসাত্মকভাবেই বলেন, ‘আয়নাঘর বলতে কিছু থাকবে না, এখানে ভাতের হোটেল বলেও কিছু থাকবে না। এখন ডিবিকে শুধু একটা অনুরোধ করব যে পুকুরটা আছে (ডিবির সামনে), সেটি আয়নার মতো পরিষ্কার করে দেন। পুকুরটা হবে আয়নার মতো পরিষ্কার।’
পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি যদি কোনো দুর্নীতি করি, আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) প্রকাশ করে দেন। তবে সত্যি ঘটনা প্রকাশ করেন। যদি কোনো অপকর্ম করি, সেটি বলে দেন। তবে যেটা করিনি, সেটা বইলেন না। মিথ্যা সংবাদ….যেমন আপনারা ইন্ডিয়ান মিডিয়ারে খুব ভালো কাউন্টার দিয়েছেন। আপনারা সত্যি সংবাদ প্রকাশ করায়, সবাই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আপনারা সত্যি সংবাদ প্রকাশ করায়, এখন তাঁরা খুব একটা (মিথ্যা সংবাদ) প্রচার করতেছে না। এখন অনেকটা কমে গেছে। এ রকমভাবে আপনারা সত্য সংবাদ অবশ্যই প্রকাশ করবেন।’
শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বাদ পড়া ৩২১ উপপরিদর্শক (এসআই) সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করে চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন, এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিটা একাডেমিতেই একটা শৃঙ্খলা আছে। বিভিন্ন কারণে কেউ আউট (বাদ) হলে, তাঁকে নেওয়া হয় না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশ একাডেমি সবচেয়ে পুরোনো এবং এই উপমহাদেশে নামকরা। তাঁরা (বাদ পড়া এসআই) যে শৃঙ্খলার কারণে বাদ পড়েছেন, এর একটা প্রমাণ হচ্ছে এখনো তাঁরা বিশৃঙ্খল কাজ করছেন। তাঁরা যদি শৃঙ্খল হতেন, তবে প্রপারভাবে (সঠিক পদ্ধতিতে) একটা অ্যাপ্লিকেশন (আবেদন) করতে পারতেন আইজি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) সাহেবের কাছে। স্যার আমার সঙ্গে ঠিক হয়নি। তাঁরা আইজি সাহেবের কাছে না গিয়ে গেছেন সচিবালয়ে। এতেই তো বোঝা যাচ্ছে তাঁরা উচ্ছৃঙ্খল।’
এ সময় ছিনতাইয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে উপদেষ্টা বলেন, দেশে যে পরিমাণ ছিনতাইকারী বেড়েছে ঠিক তেমনভাবে গ্রেপ্তারও করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
লিবিয়াতে বন্দী রেখে মুক্তিপণ আদায়ের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার কোনো অভিযোগ দিলে অবশ্যই সেটি আমলে নেওয়া হবে। সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফে অপহরণের ঘটনা ঘটছে, তাতে সবাই উদ্ধার হয়ে গেছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
বাংলাদেশের সীমান্তের উল্টোদিকে মিয়ানমার অংশ পুরোটা আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে বলে জানান তিনি।
আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকার উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্ডার যেন শান্ত থাকে, আমাদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, আমরা সজাগ আছি। আমাদের বর্ডার কিন্তু পুরোটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। টেকনাফে শুধু অপহরণকারীই নয়, মাদক চক্র অ্যাকটিভ আছে।’