ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঙ্গলবার রাতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন সাম্য। এ ঘটনায় এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার কারে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) এবং ডাসার থানার যতিন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)।
আর গ্রেপ্তারকৃত তিনজনের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত তিনজন এলাকায় নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল। সরকার পতনের আগে তামিম ও পলাশ গ্রামে নিজ বাড়িতেই থাকতো। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে চলাফেরা করতো বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ডাসার উপজেলার নবগ্রাম শশীকর এলাকার সম্রাট মাদকাসক্ত বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সম্রাট ডাসার উপজেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মানসুরা আলম একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন। সেখানে সম্রাটে ছবি এবং তার দলীয় পরিচয় তুলে ধরেন। সেখানে উপজেলা শ্রমিক দলের প্যাডের পূর্ণাজ্ঞ কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকে সম্রাট নামের একজন রয়েছেন। তবে শ্রমিক দলের প্যাডে নাম থাকা সম্রাট এবং গ্রেপ্তার সম্রাট একই ব্যক্তি কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, সোহেল খাঁ ও রুবেল খাঁ নামের লোকাল আওয়ামী লীগ নেতার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করতো গ্রেপ্তার হওয়া তামিম ও পলাশ।তবে আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো পদ-পদবি ছিল না তাদের। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের ছত্র-ছায়ায়ই চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে সাথে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তামিম ও পলাশ ঢাকায় চলে যায়।
তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায়ও মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। ডাসার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. এহতেশামুল ইসলাম জানান, সম্রাটের বিরুদ্ধে ডাসার ও ডিএমপির রুপনগরসহ বিভিন্ন থানায় ৩ মাদক মামলা রয়েছে। তার বিষয় আমরা বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছি।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য। হত্যার ঘটনায় সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও আসামিদের দ্রুত বিচারের দাবিতে গতকাল বুধবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রদল। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য উপাচার্য ও প্রক্টরকে দায়ী করে তাঁদের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
রাজধানীর শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে রাজাবাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা ফার্মগেটে ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করেন। অভিযোগ রয়েছে, গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে দুজন ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন।’
ইতিমধ্যে আদালত থেকে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের ধরতে এবং হত্যার পূর্ণ তদন্তের জন্য আদালতের কাছে তাঁদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। আদালত আবেদন শুনানির জন্য রেখে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।