মার্চের শুরুর দিকের কথা। লিভারপুলের সামনে তখন তিন শিরোপা জয়ের হাতছানি। প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লিগ কাপ—তিনটিতেই ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল অ্যানফিল্ডের দলটিকে। আর তিন শিরোপা জিতিয়ে মোহাম্মদ সালাহর ব্যালন ডি’অর জেতাও তখন আলোচনার কেন্দ্রে।
লিভারপুল ছাড়ার আগে বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেতে উন্মুখ ছিলেন সালাহ নিজেও। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে এলোমেলো হয়ে যায় সালাহর স্বপ্ন। মাত্র ৫ দিনেই তিন শিরোপার দুটিই হাত ফসকে যায় লিভারপুলের। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়া দলটি লিগ কাপের ফাইনালে হারে নিউক্যাসলের কাছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায়ই সালাহর ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বপ্নকে কার্যত শেষ করে দিয়েছে। এমনকি প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্সও (৩৩ ম্যাচে ২৭ গোল ও ১৮ সহায়তা) এখন আর আশা দেখাতে পারছে না সালাহকে। কেবল অতিনাটকীয় কিছুই এখন পারে সালাহর হাতে ব্যালন ডি’অর তুলে দিতে।
শুধু সালাহই নন, রেস থেকে এরই মধ্যে পিছিয়ে গেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং জুড বেলিংহামরাও। কারণও একই। চ্যাম্পিয়নস লিগ–ব্যর্থতা। চ্যাম্পিয়নস লিগের রাজা রিয়াল এবার কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেই বিদায় নিয়েছে। রিয়াল লা লিগার জয়ের দৌড়েও পিছিয়ে আছে বার্সেলোনার চেয়ে।
রিয়ালের চেয়ে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা বার্সাই এখন লিগ জয়ের রেসে ফেবারিট। পিছিয়ে থাকলেও রিয়ালের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতলেও তা ব্যালন ডি’অর জয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারবে না ভিনি-এমবাপ্পেদের।
পাশাপাশি মৌসুমজুড়ে কেউ এককভাবে অসাধারণ কিছু করে দেখিয়েছেন, তা–ও নয়। তবে রিয়াল এ বছর ক্লাব বিশ্বকাপে খেলবে, বার্সেলোনা যেখানে আবার দর্শক। এর ফলে ভিনি-এমবাপ্পেদের সুযোগ আছে সেখানে অতিমানবীয় কিছু করে দেখিয়ে পাশার দান বদলানোর। তেমন কিছু আদৌ হবে কি না, তা জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
বায়ার্ন মিউনিখ তারকা হ্যারি কেইনেরও সুযোগ ছিল রেসে থাকার। চলতি মৌসুমে ৪৩ ম্যাচে ৩৬ গোল ও ১২টি সহায়তা করেছেন এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আট থেকে বিদায় নিয়েছে তার দলও। যে কারণে সালাহ-এমবাপ্পেদের মতো রেস থেকে পিছিয়ে পড়েছেন তিনিও।
প্রশ্ন হচ্ছে, সময়ের অন্যতম সেরা এই তারকারা যদি না থাকেন, তবে এবার রেসে আছেন কারা। এই তালিকায় সবার ওপরে আছেন রাফিনিয়া। ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছেন এই ব্রাজিলিয়ান। বার্সেলোনার হয়ে আছেন অবিশ্বাস্য ছন্দে। চলতি মৌসুমে বার্সার হয়ে ৪৮ ম্যাচে ৩০ গোল ও ২৩টি অ্যাসিস্ট করেছেন এই উইঙ্গার।
শুধু পরিসংখ্যানের দিক থেকেই নয়, ম্যাচে প্রভাব বিবেচনা করলেও বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছেন রাফিনিয়া। এখন বার্সা যদি লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় নিশ্চিত করতে পারে, তবে রাফিনিয়ার ব্যালন ডি’অর জয়ে বাকিদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন।
এই তালিকায় দ্বিতীয় নাম উসমান দেম্বেলে। এরই মধ্যে লিগ আঁর শিরোপা নিশ্চিত করা এই পিএসজি তারকার সুযোগ আছে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়েরও। দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে এখন সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে দেম্বেলের পিএসজি। আর এই পথে দলের হয়ে ৪২ ম্যাচে ৩২ গোল ও ১১টি সহায়তা করেছেন এই ফরাসি তারকা। এখন পিএসজি যদি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারে, তবে দেম্বেলেও এগিয়ে যাবেন ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে।
তালিকার তৃতীয় নামটিও বেশ অনুমেয়, লামিনে ইয়ামাল। এই সময়ের অন্যতম সেরা সৃষ্টিশীল ফুটবলার। বল পায়ে রীতিমতো ফুল ফোটাতে পারতেন এই উইঙ্গার। মাঠে তার উপস্থিতিই বদলে দিতে পারে ম্যাচের গতিপথ। মৌসুমে অনেকগুলো ম্যাচে বার্সাকে এককভাবে উদ্ধার করেছেন ইয়ামাল।
পরিসংখ্যানেও একেবারে পিছিয়ে নেই এই স্প্যানিশ তারকা। ৪৬ ম্যাচে অবদান রেখেছেন ৩৬ গোলে (১৪ গোল ও ২২ অ্যাসিস্ট)। তবে ইয়ামালের ব্যালন ডি’অর জিততে হলে বার্সার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা জরুরি। তেমন হলে ইয়ামালকে লড়াই করতে হবে সতীর্থ রাফিনিয়ার সঙ্গেই।
একইভাবে তালিকায় আছেন রবার্ট লেভানডফস্কিও। তিনিও অবশ্য সেই বার্সেলোনারই। তাই সব জিতলেও ৪৮ ম্যাচে ৪০ গোল ও ৩ সহায়তা করেও ব্যালন ডি’অর নিশ্চিত হবে না। কারণ, তাকে সে ক্ষেত্রে লড়তে হবে দুই সতীর্থ রাফিনিয়া ও ইয়ামালের সঙ্গেই।
এ তালিকার বাইরে রাখা সুযোগ নেই ইন্টার মিলানের আর্জেন্টাইন তারকা লাওতারো মার্তিনেজকেও। এই মুহূর্তে সিরি আ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ দুটোই জেতার সুযোগ আছে ইন্টারের। আর ক্লাবটির হয়ে এ মৌসুমে ৪৪ ম্যাচে ২১ গোল ও ৬ অ্যাসিস্ট করেছেন মার্তিনেজ। পরিসংখ্যানে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ট্রফি জয় খুলে দিতে পারে এই স্ট্রাইকারের ভাগ্য।