চলতি বছরে তিনদফা বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট। সর্বশেষ জুনে হওয়া বন্যা ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ। এবার সেপ্টেম্বরে এসে ফের সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটের উজানের ভারতীয় রাজ্যগুলোতেও। ফলে নামছে ঢল। এতে সিলেটে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাত থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত টানা কয়েক ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিতে নগরীর কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে।
নগরের চন্ডিপুল-পুলেরমুখের বঙ্গবীর রোড, চৌহাট্টা-নয়াসড়ক, রাজারগলি, পায়রা, বাদাম বাগিচা, খাসতবীরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এসব এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানপাটেও পানি প্রবেশ করেছে।
নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ে একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, অল্প বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটুপানি হয়ে যায়। জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন নগরের নিচু এলাকার মানুষ। বিভিন্ন বাসার নিচতলা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাসিন্দারা খাটের ওপর তুলে রাখেন। অনেক বাসার মেঝেতে থাকা জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হচ্ছে।
নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পায়রা এলাকার বাসিন্দা মো.আজমল আলী জানান, মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় নগরের ১নং ওয়ার্ডের মিরের ময়দান, পায়রা, রাজারগলি এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে। অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি ওঠে। এতে স্থানীয় লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পায়রা এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
দক্ষিণ সুরমার রোমান আহমদ বলেন, পুরো বছরজুড়ে ড্রেনের কাজ চলে। কোনো কুল-কিনারা নেই। বৃষ্টি হলেই বঙ্গবীর সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়ে। গোড়ালি থেকে হাঁটুপানি হয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে যাওয়া আসা করতে হলে ভোগান্তির শেষ নেই।
কাওছার মিয়া নামে আরেকজন বলেন, নগরে অধিকাংশ ড্রেনের কাজ অর্ধসম্পন্ন। কাজ চলছে ধীরগতিতে। তাই বৃষ্টি হলেই পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া অনেক নালা, নর্দমা ও ছড়া ভরাট হয়ে গেছে। পানি সহজে নামতে পারে না।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা সদরের নদ-নদীগুলোতে পানি দ্রুত বাড়ছে। চলতি সপ্তাহেই এখানকার নদী তীরবর্তী ও পাহাড়ি এলাকাগুলোতে স্বল্প স্থায়ী বন্যা শুরু হতে পারে। তবে বিভাগের হাওরাঞ্চলে ফসল না থাকায় বন্যার পানিতে খুব বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। বৃষ্টি হবে আগামী সপ্তাহেও।
তবে এখনও বন্যার কোন পূর্বাভাস পাননি বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের উপনির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, উজানে (ভারতে) ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দেশের ভেতরেও বৃষ্টি বাড়ছে। ফলে তিস্তা অববাহিকা ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি স্থানে চলতি সপ্তাহে বেশিরভাগ সময়জুড়ে বন্যা হতে পারে। তবে বৃষ্টি ও বন্যার পানি বেশি দিন স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা কম বলে জানান আরিফুজ্জামান ভূইয়া।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হওয়ায় সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আরও কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাত হতে পারে। গত শনিবার দিবাগত রাতে ও সোমবার সকালে সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশের সব নদীতে পানি বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
পাউবো সূত্র জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল (সিলেট) ও তৎসংলগ্ন ভারতের কিছু স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে এ সময়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।
এর আগে গত জুনের বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। এই দুই জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়।