চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সব অক্সিজেন কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে মালিকপক্ষ। কাল শনিবার থেকে আবার সব কারখানা চালু হবে। একই সঙ্গে কাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিতব্য মানববন্ধন কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মালিকপক্ষ ও শিল্প পুলিশের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়। দেড় ঘণ্টা বৈঠকের পর রাত আটটার দিকে সংবাদ ব্রিফিং করে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা জানান তাঁরা।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সীমা অক্সিজেন কারখানার পরিচালক পারভেজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করার প্রতিবাদে একটি সভা করে জাহাজভাঙা শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ এবং শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ছাড়া পারভেজের মানহানি করা পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তির দাবি জানানো হয়। গতকাল রাতে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এ ঘোষণা জানানো বিএসবিআরএ এর পক্ষ থেকে।
আজ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরিত কারখানার পরিচালক পারভেজ উদ্দিনকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়ায় মালিকপক্ষের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছিল। আমরা তাদের বলেছি, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা তাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। কিন্তু মামলা আদালতের মতো করে চলবে। আমাদের আশ্বাসে তারা সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।’
কারখানামালিক পক্ষ থেকে জহিরুল ইসলাম টিংকু বলেন, শিল্প পুলিশ পারভেজের কোমরে দড়ি বেঁধে ব্যবসায়ীদের ছোট করেছে। বিষয়টি তাঁরা তুলে ধরেছেন। শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ জন্য প্রশাসনের অনুরোধে কালকের মানববন্ধন ও কারখানা বন্ধের ঘোষণা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ চাই না, আমাদের কারখানায় কোনো দুর্ঘটনা হোক। দুর্ঘটনার পর মালিকপক্ষ পালিয়ে যায়নি। দুর্ঘটনার দুই দিন পরও প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং করেছে। জেলা প্রশাসকের অনুরোধে ৩ ঘণ্টার মধ্যে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।’
শিল্প পুলিশ চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. সোলায়মান বলেন, পারভেজ উদ্দিনকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ওই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ওই উপপরিদর্শকের অজ্ঞতার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে।
উল্লেখ্য গত ৪ মার্চ বিকেলে সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায় সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় নিহত এক ব্যক্তির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় সীমা অক্সিজেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দিন ও দুই পরিচালকসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্প পুলিশ চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট এলাকা থেকে সীমা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সীমা অক্সিজেন কারখানার পরিচালক পারভেজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার তাঁকে কোমরে দড়ি বেঁধে ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আদালতে তোলা হয়। এরপর কোমরের দড়ি বাঁধার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।