27 C
Dhaka
Friday, November 15, 2024

সীতাকুণ্ডে​​​​​​​ বিএম কন্টেইনার বিস্ফোরণে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়

- Advertisement -

সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফারণের ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা। ঘটনার এক সপ্তাহ পর পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপশি স্থানীয় বাসিন্দাদের শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আগুন লাগার পর অন্তত ৬৫ ঘণ্টা লাগে নিয়ন্ত্রণে আনতে। আর পুরোপুরি নেভাতে লেগেছে ৯৫ ঘণ্টার বেশি। তারপরও কালো ধোঁয়ার নির্গমন বন্ধ হয়নি।এতে চোখের যন্ত্রণার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এমনিতে আগুন ও বিস্ফোরণের পরপরই আতঙ্কিত হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে গেছেন অনেকে। তারা যেমন বসতবাড়িতে ফেরেননি, তেমনি বাকি যারা বাড়িতে ছিলেন তারাও গ্রাম ছাড়ছেন অসুস্থতার ভয়ে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, কন্টেইনার ডিপোটিতে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ছিল। হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এটি যদি উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বিস্ফোরকের আচরণ করে। আগুন লাগার পর কন্টেইনারগুলোয় বিস্ফোরণ ঘটে।

গত ৪ জুন শনিবার রাতের বিকট বিস্ফোরণের পর কন্টেইনারে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক মিশে গেছে বাতাসে। আবার পানির সঙ্গে মিশে চলে গেছে বিভিন্ন খাল হয়ে বঙ্গোপসাগরে। বিস্ফোরণের পর থেকেই সীতাকুণ্ডের ওই এলাকায় ঝাঁজালো গন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই চোখে ঝাপসা দেখছেন; কারও কারও চামড়া বিবর্ণ বা লাল হয়ে গেছে। শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, বমিসহ দেখা দিচ্ছে নিত্যনতুন নানা উপসর্গ।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পরিবেশবিদরা বলছেন, সীতাকুণ্ডের এই এলাকায় প্রকৃতি বা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকিতে পড়তে পারে। সেটা স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। এ অবস্থায় ভারী বৃষ্টিপাত হলে বায়ুদূষণ কমে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে রাসায়নিক মিশ্রিত পানি খালগুলোতে গিয়ে দূষণ সৃষ্টি হতে পারে। সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যের ওপর নিঃসন্দেহে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তারা আরও বলছেন, সীতাকুণ্ডের বাতাসে কী পরিমাণ রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, সেটা পরিমাপ করে দেখতে পারে পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই এলাকার বাতাসে পিপিএমের (পার্টস পার মিলিয়ন) মাত্রা বেশি হলে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব পড়বে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ডিপোর প্রবেশপথে দক্ষিণ পাশে গভীর ও চওড়া একটি নালা। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মিশ্রিত পানি যাতে খাল-বিলে গিয়ে দূষণ ঘটাতে না পারে সেজন্য নালার মাঝ বরাবর বালির বস্তা ফেলে বাঁধ নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা। ঘটনার পরদিন তৈরি করা ওই বাঁধ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া প্রত্যক্ষভাবে ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আর এর দূরবর্তী প্রভাব পড়েছে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে।

বিএম ডিপোর পাশ্ববর্তি মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান হোসেন জানান, ভয়াবহ আগুনে আশপাশের এলাকাগুলোয় রাসায়নিকের পোড়া গন্ধে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তার পাঁচ বছরের সন্তান ধোঁয়ায় অসুস্থবোধ করলে আরেক আত্মীয়ের বাড়িতে পরিবারকে রেখে এসেছেন বলে জানান তিনি।

এলাকার বাসিন্দা হাফিজ মোহাম্মদসহ কয়েকজন বলেছেন, গত শনিবার রাতে যখন আগুন লাগে এবং পরপর বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে তখন যে পরিমাণ পানি ছেটানো হয়েছিল, সেগুলো এবং বিষাক্ত রাসায়নিক অধিকাংশই নালার মাধ্যমে খালে বা সাগরে চলে গেছে। তবে সেনাবাহিনী এসেই নালাগুলো বন্ধ করে দিয়ে দূষিত পানি খাল-বিলে যাওয়া রোধ করে। তারা বলেন, পানির সঙ্গে মিশে যাওয়া ছাড়াও বিস্ফোরণে যে পরিমাণ বিষাক্ত রাসায়নিক বাতাসের সঙ্গে মিশেছে, সেটিও এখন আমাদের জন্য বড় হুমকি। এখানকার পরিবেশ নিয়ে আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

কথা হয় দুর্ঘটনার পর থেকেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী স্থানীয় বাসিন্দা আলী আকবরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চোখ খুব জ্বালা-পোড়া করছে। মাঝেমধ্যেই ঝাপসা দেখছি। মুখমণ্ডল জ্বলছে। শরীরে বেশ অস্বস্তি অনুভব করছি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। কেমিকেলের ঝাঁজালো গন্ধ নাকে লেগে থাকছে।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আরিফুল হক সাদিক বলেন, ‘ডিপো থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরের বাসিন্দারাও বাতাসে পোড়া গন্ধ পাচ্ছে। আমি নিজেও চোখে ঝাপসা দেখছি। খাবার খেতে সমস্যা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর যা হয়েছে, সেটাকে বলা হয় ‘কেমিকেল বার্ন’। এটার মাধ্যমে বায়ু দূষিত হয়েছে। আবার কেমিকেলের তরলগুলো পানির সঙ্গে মিশেছে। সব মিলিয়ে ওই এলাকায় ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তেই পারে। চোখের সমস্যা, চামড়ার ক্ষত বা ঘা হওয়া, নিশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে গিয়ে সেখানে সংক্রমণ সৃষ্টি করা, লিভার-কিডনিসহ নানা ধরনের জটিল সমস্যা হতে পারে। এটা এখনও হতে পারে আবার কিছুদিন পরও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। রাসায়নিকের এই বিরূপ প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। এই প্রভাব থেকে যাবে ওখানকার বাতাস, খাদ্য ও পানিতে।

এ অবস্থায় স্থানীয়দের করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবদুল্লাহ বলেন, শরীরে এই জাতীয় কোনো লক্ষণ বা সমস্যা দেখা দিলে কোনোভাবেই দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আরও একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে রাসায়নিক বিস্ফোরণের প্রভাবে আশপাশের লোকজন আক্রান্ত হতে পারে কেমিকেলজনিত নানা রোগব্যাধিতে। এসবের মধ্যে রয়েছে- অঙ্গহানি, শ্বাসকষ্ট, ঝিমুনি, বমি বমি ভাব, নাক ও গলার জ্বালা, চামড়ায় ফুসকুড়ি, ক্লান্তি, ক্রুটিপূর্ণ শিশুর জন্ম, গর্ভপাত, বন্ধ্যাত্ব, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, ক্যানসার, রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, ফুসফুসের রোগ, জন্ডিস, চর্মরোগ, অ্যাজমা, নাসারন্ধ্রের ক্যানসার ইত্যাদি।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনাস্থলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এগুলো স্থানীয় জনগণসহ আশপাশের পরিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি করবে, যা স্থায়ীভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উদ্ধারকাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রাসায়নিকের অনেক উপাদান মাটিতে মিশে থাকবে। অনেক উপাদান পাশের সাগরে গিয়ে মিশে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করবে। এভাবে মানুষ, পরিবেশ ও প্রতিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি করবে।

সীতাকুণ্ড দুর্ঘটনার রাসায়নিক ক্ষতি ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ। তিনি বলেন, রাসায়নিক দূষণ এক জায়গায় থেমে থাকে না। চোখে না দেখা গেলেও তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা মানবদেহের ক্ষতি করে।

সীতাকুণ্ডে পরিবেশের প্রভাব নিয়ে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয়ের পরিচালক মুফিদুল আলম । তিনি বলেন, আগুন বা বিস্ফোরণ এমনিতেই পরিবেশের ক্ষতি করে। এর মধ্যে সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বাতাসে মিশে গিয়ে পরিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। তিনি বলেন, যেকোনো বিস্ফোরণে সাধারণ তিন ধরনের ক্ষতি হয়। রাসায়নিক বাতাসের সঙ্গে মিশে বাতাস দূষিত করাসহ স্থায়ী বিরূপ প্রভাব তৈরি করে; দীর্ঘ সময়ের জন্য মাটিতে মিশে মাটির গুণাগুণ ও সক্ষমতা নষ্ট করে এবং নদ-নদীসহ আশপাশের জলাধারে মিশে বড় ধরনের ক্ষতি করে। সীতাকুণ্ডে পরিবেশের এই তিন ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, আমাদের দেশে কোনো ঘটনা ঘটে গেলে সবাই আলোচনা করে, কমিটি গঠন করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। সাধারণ মানুষকে এর খেসারত দিতে হয় জীবন দিয়ে। শুধু এই অঞ্চলই নয়, দেশের যে প্রান্তেই রাসায়নিক পদার্থ রাখা হোক না কেন, তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেছেন, বিষাক্ত কেমিকেল যুক্ত পানি যেন বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে অন্তত ২৭টি কেমিকেল ভর্তি কনটেইনার ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এর মধ্যে একটি কন্টেইনার বিস্ফোরণ হয়। বাকি কন্টেইনার গুলো সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বিস্ফোরণের পর কেমিকেলযুক্ত পানি যেন বঙ্গোপসাগরে মিশতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, বিস্ফোরণে মারা গেছেন ৪৫ জন। আহত হয়েছেন ৩ শতাধিক। উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের ১০ কর্মীও জীবন দিয়েছেন।

- Advertisement -
ফেস দ্যা পিপল লাইভ টক শো উইথ সাইফুর সাগর
Video thumbnail
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের দুই পক্ষের সং'ঘ'র্ষ! আ'হ'ত ৫ নিয়ে এ কী বললেন সমন্বয়ক ইসমাইল সম্রাট?
09:41
Video thumbnail
এই সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে এ কী দাবি জানালেন সমন্বয়ক আশিকুর রহমান অভি?
09:25
Video thumbnail
মাইনাস ফর্মুলাতে এগুচ্ছে সরকার? যৌক্তিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে যে সমস্যার আশংকা! মুন্নি চৌধুরী
11:31
Video thumbnail
যাকে তাকে উপদেষ্টাতে নিয়োগ! ছাত্রদের সংখ্যা উপদেষ্টাতে বাড়াতে না পারা আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল! : জিম
13:31
Video thumbnail
কেন এই সরকারের সাথে সমন্বয়হীনতা! কারা উপদেষ্টা হচ্ছে জানে না কেউই! কঠোর মন্তব্য সমন্বয়ক অভির!
09:07
Video thumbnail
ড. ইউনূসের সরকার ব্যর্থ! এই সরকার দেশ চালাতে পারছে না! কেন এতো উত্তেজিত ইসমাইল সম্রাট?
11:53
Video thumbnail
মুখোমুখি মাসুদ অরুন।
26:26
Video thumbnail
মাইনাস ফর্মুলাতে এগুচ্ছে সরকার? দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা?
01:14:18
Video thumbnail
বাংলাদেশের সামনে ম'হা'বি'পদ, যা মোকাবেলার সামর্থ বাংলাদেশের নেই: মেজর জে. ফজলুর রহমান
11:56
Video thumbnail
আমি চাই না এদেশে ই'স'লা'মের নামে রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু হোক! এডঃ ফজলুর রহমান
24:48

সর্বশেষ

আমাদের সাথে সংযুক্ত হোন

1,600,000FansLike
428FollowersFollow
1,270,000SubscribersSubscribe