ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওয়াজ মাহফিল শেষে ফেরার পথে এক ইসলামি বক্তার ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার ব্যক্তিকে আটক করেছে র্যাব।আটককৃতদের বরাতে র্যাব জানিয়েছে, ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া বক্তব্য গ্রহণযোগ্য মনে না হওয়ায় বাড়ি ফেরার পথে ইসলামি (সুন্নি) বক্তা মাওলানা শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়ার ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়।
বুধবার( ৮ মার্চ) বেলা দুইটায় জেলা শহরের সরকারপাড়া এলাকায় র্যাব-৯-এর অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত চারজনকে আটক করে র্যাব। এর আগে আখাউড়া থানা-পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– বিজয়নগর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের জাকির হোসেন ওরফে জাক্কু (৪৮), একই গ্রামের মাহবুবুল আল শিমুল (৩৩), একই উপজেলার চাওড়া গ্রামের মো. সুমন (৩৫) ও কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার চাওড়া দৌলতবাড়ি গ্রামের মো. আমিরুল ইসলাম (২০)।
এ ছাড়া বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল গ্রামের শাহিনুর ইসলামকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে আখাউড়া থানা-পুলিশ।
এ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উইং কমান্ডার মুমিনুল হক বলেন, ইসলামি বক্তার ওপর হামলার বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশে আলোচিত হলে র্যাবের একাধিক দল ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হামলায় জড়িত আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে র্যাব। গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে মামলার এজাহারনামীয় আসামি জাকিরসহ মাহবুবুল, সুমন ও আমিরুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একাধিক অভিযানকারী দল।
আসামিদের বরাতে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ইসলামি বক্তা শরীফুল ইসলাম বিজয়নগরের দৌলতবাড়ি দরবার শরিফে ওই বক্তব্য দেন। মাহফিলে তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ আসামিদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। এ জন্য তাঁরা ইসলামি বক্তার ওপর খেপে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর জেরে মাহফিল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে আসামিরা তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালান। হামলায় ওই বক্তার জিব কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গা জখম হয়।
আমরা ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি উল্লেখ করে র্যাবের কমান্ডার মুমিনুল হক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জড়িত থাকার কথা র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে ধর্মীয় কোনো সংগঠনের সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বাকি বিষয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে উদ্ঘাটন করবেন।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুল ইসলাম বলেন, হামলায় ইসলামি বক্তার জিব কেটেছে সত্য। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে জিব টেনে কেটে ফেলা হয়েছে, ঘটনা তেমন নয়। গাড়িতে যাওয়ার সময় বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয়। আঘাত চোয়াল ও ঠোঁটে লাগে। বাঁশের কারণে নাকি দাঁতের কারণে জিব কেটেছে, সেটি নিশ্চিত নন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার দিবাগত রাতে ওয়াজ মাহফিল শেষে বাড়িতে ফেরার পথে আখাউড়ার রামধননগর এলাকায় ইসলামি বক্তা শরীফুল ইসলামের (৩৮) ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। হামলায় আহত শরীফুল সদর উপজেলার চাপুইর গ্রামের কাজী আবদুর রফিক ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি বিজয়নগর উপজেলার শ্রীপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক এবং সদর উপজেলা ইসলামি যুবসেনার সাধারণ সম্পাদক।