দেশের ইতিহাসের যুগান্তকারী পদ্মা সেতুর উদবোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্চারণ করলেন জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণের বাণী, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’। সেতুর উদবোধনী বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা বললেন, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, আমরা বিজয়ী হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা বাধা দিয়েছিল, তাদের একটা জবাব আমরা দিয়েছি। তাদেরকে একটা উপযুক্ত জবাব আমরা পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে দিতে পারলাম যে, বাংলাদেশও পারে।’
আজ শনিবার (২৫ জুন) সকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতুর উদবোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মাথা নোয়াইনি, আমরা কোনদিন মাথা নোয়াব না, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও কখনও মাথা নোয়াননি, তিনি আমাদের মাথা নোয়াতে শেখান নাই, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও তিনি জীবনের জয়গান গেয়েছেন। তিনি বাংলার মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা চেয়েছিলেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
দেশের দীর্ঘতম এই সেতু উদ্বোধন করে গাড়িতে করে তা পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে গিয়ে পূর্ব নির্ধারিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে স্মারক ডাক টিকেট, সুভ্যেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিল মোহর এবং ১শ’ টাকা মূল্যের স্মারক নোট অবমুক্ত করেন।
এসময় পদ্মা সেতুর নির্মাণকারক কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে একটি পদ্মা সেতুর একটি রেপ্লিকাও উপহার দেওয়া হয়। নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটো সেশনেও অংশ গ্রহণ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট, স্টিল-লোহা-কংক্রিটের একটা অবকাঠামো নয়; এই সেতু আমাদের সাহস। এই সেতু আমাদের গর্ব, এই সেতু আমাদের সক্ষমতা এবং আমাদের মর্যাদার শক্তি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে আমরা পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর খালেদা জিয়া এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আবার নির্মাণ কাজ শুরু করি।তখন তারা কী বলেছিল? বলেছিল, আওয়ামী লীগ কোনোদিন নাকি পদ্মা সেতু করতে পারবে না। খালেদা জিয়াকে আজকে জিজ্ঞেস করি- আসুন, দেখে যান, পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি না।’
বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে দুর্নীতি করেছে? এই সেতু আমাদের প্রাণের সেতু। যে সেতুর সাথে আমার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত, সেই সেতু করতে যেয়ে কেন দুর্নীতি হবে?’
বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভবপর নয় বলে যারা নিরুৎসাহিত করেছিলেন, তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে কীভাবে করতে পারলাম? আপনারা এই দেশের জনগণ আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, পাশে থেকেছেন। জনগণের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি সেটাই বিশ্বাস করেছি।’
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আর আপনাদের কষ্ট করতে হবে না। এই খরস্রোতা পদ্মা নদী পার হতে যেয়ে আর কাউকে সন্তান হারাতে হবে না, বাবা-মাকে, ভাই-বোনকে হারাতে হবে না। আজকে সেখানে আপনারা নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।আমাদের প্রত্যেকটা এলাকা এত দুর্গম ছিল, আজকে সেখানে রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ করেছি বলেই সব জায়গায় যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে। এই এলাকার লোক যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, সেজন্য পায়রা পর্যন্ত আমরা সেতু বানিয়ে দিয়েছি। এখন নিশ্চিন্তে মানুষ চলাফেরা করতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা দেশে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। আজকে পদ্মা সেতু হয়েছে। এখানেও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে, শিল্পাঞ্চল হবে, কর্মসংস্থান হবে, কল-কারখানা হবে, আমাদের ফসল উৎপাদন হবে। সেই ফসল আমরা প্রক্রিয়াজাত করতে পারব। দেশে-বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। এখানে যে মাছ হবে, তা আমরা প্রক্রিয়াজাত করে দেশে-বিদেশে পাঠাতে পারব। বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ ঘুচে যাবে। ভাগ্য পরিবর্তন হবে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পকলা একাডেমি নির্মিত দেশের বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে থিম সং পরিবেশিত হয়। পরে পদ্মা সেতুর ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।