আফ্রিকান দেশ ‘সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক’ এ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত অবস্থায় বাংলাদেশের তিন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হন আরো একজন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর মঙ্গলবার এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অভিযান পরিচালনার সময় সোমবার (৩ অক্টোবর) সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি গাড়ি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণের শিকার হয়। এতে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং একজন আহত হন।
নিহতরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানার কাটিঙ্গা গ্রামের সৈনিক জসিম উদ্দিন (৩১), নিলফামারী জেলার ডিমলা থানার দক্ষিণ টিট পাড়ার সৈনিক জাহাংগীর আলম (২৬) এবং সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার বাড়াক রুয়া গ্রামের সৈনিক শরিফ হোসেন (২৬)। এ ছাড়া টহল কমান্ডার মেজর আশরাফুল হক আহত হন।
আইএসপিআর জানায়, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের পশ্চিম সেক্টরে বোয়ার এলাকায় মোতায়েন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন (ব্যানব্যাট-৮) গত বছরের ৯ নভেম্বর থেকে বিস্তীর্ণ এলাকায় শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। দুর্গম এলাকায় মোতায়েন অস্থায়ী ক্যাম্প কুই থেকে পরিচালিত যান্ত্রিক টহলের একটি দল মেজর আশরাফের নেতৃত্বে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কাইতা এলাকায় টহলে যায়। ফেরার পথে টহল কমান্ডার মেজর আশরাফকে বহনকারী প্রথম গাড়িটি মাটিতে পুতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে পতিত হয়। এতে গাড়িটি প্রায় ১৫ ফুট দূরত্বে ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সৈনিক শরিফ, সৈনিক জাহাংগীর ও সৈনিক জসিম মারাত্মকভাবে আহত হন।
ঘটনার পরপরই আহতদের জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য দুর্গম এলাকা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং ঘন অন্ধকারের মধ্যে উদ্ধার তৎপরতার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়। মিশন সদর, জাতিসংঘ সদর এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুততার সঙ্গে ১৪৪ কি. মি. দূরে বোয়ার-এ অবস্থিত মিনুসকা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সৈনিক মো. জসিম উদ্দিন, সৈনিক মো. জাহাংগীর আলম এবং সৈনিক শরিফ হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপর আহত শান্তিরক্ষী মেজর মো. আশরাফুল হক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়োজিত অন্যান্য শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে আছেন। নিহত সেনাদের মৃতদেহ দ্রুততম সময়ে দেশে আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা আফ্রিকার ৮টি দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে চলেছে এবং জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।