বাংলাদেশে সাধারণত রমজান মাস শুরু হয় সৌদি আরবের একদিন পরে। ফলে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা এবং ঈদের দিন নির্ধারণের বিষয়েও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-সৌদি আরবের মধ্যে একদিনের পার্থক্য থাকে। তবে বাংলাদেশের কিছু এলাকায় সৌদি আরবকে আদর্শ ধরে রোজা ও ঈদের দিন নির্ধারণ করেন মুসল্লিরা।
এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (৩০ মার্চ) সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদুল ফিতর পালন করছেন তারা। দেশের কোন কোন জেলায় রোববার ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে সেগুলোর বিস্তারিত থাকছে এই প্রতিবেদনে।
চাঁদপুর
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামে পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। রোববার সকাল থেকে হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফসহ জেলার প্রায় অর্ধশত গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। ঈদের প্রথম জামায়াত দরবার শরীফ মাঠে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। এই জামায়াতে ঈমামতি করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী।
তিনি বলেন, আগাম রোজা ও দুই ঈদ পালনের প্রবর্তক মাওলানা ইসহাক (রহ.)। ১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা দরবার শরিফের পীর সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রথা চালু করেন। পৃথিবীতে চন্দ্র-সূর্য একটি। আলাদা করে কেনো ঈদ উদযাপিত হবে।
চাঁদপুরের যেসব গ্রামে আগাম ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে—হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, প্রতাপুর, বাসারা, ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর, মতলব উপজেলার দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী এবং কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলাসহ অর্ধশত গ্রাম।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর চারটি গ্রামের মুসলিমরা আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। রোববার (৩০ মার্চ) সকাল ৯টায় তিন উপজেলার ১০টি মসজিদে একযোগে ঈদের জামাতে অংশ নেয় এই চার গ্রামের মুসল্লিরা।
জানা গেছে, বড় পীর আবু মুহম্মদ মহিউদ্দীন সৈয়দ আবদুল কাদির জিলানী (রঃ) এর মতাদর্শে তৈরি হয় কাদেরিয়া তরিকা। এই তরিকার অনুসারী লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিণারায়নপুর, বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর, রামভল্লবপুর গ্রামের বাসিন্দারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছর একদিন আগে রোজা রাখে। এছাড়া ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাও পালন করে থাকে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা প্রায় ১০০ বছর ধরে ঈদ জামাতের আয়োজন করে আসছেন।
নোয়াখালীর যেসব গ্রামে আগাম ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে— নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর ও হরিণারায়নপুর গ্রাম, কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ ইউনিয়নের রামভল্লবপুর, বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর গ্রাম।
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের একটি গ্রামে ঈদ উদযাপন করছেন মুসল্লিরা। জেলার দেলদুয়ার উপজেলার শশীনাড়া গ্রামের ৪০টি পরিবার ঈদ উদযাপন করেছেন বলে জানা গেছে। আজ রোববার সকাল ৮টায় স্থানীয় মসজিদের মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের শশীনাড়া গ্রামের কিছু মুসুল্লি ২০১২ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে রোববার সকাল ৮টায় স্থানীয় মসজিদের মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন ওই গ্রামের প্রায় ৪০টি পরিবারসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা মুসল্লিরা। ঈদের নামাজ পড়ান হাফেজ এরশাদ হোসেন।
জামালপুর
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ১৩ গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় সরিষাবাড়ী পৌরসভার বলারদিয়ার মধ্যপাড়া মাস্টার বাড়ি জামে মসজিদ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বলারদিয়ার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিম উদ্দিন।
উপজেলার বলারদিয়ার, মূলবাড়ী, সাতপোয়া, সাঞ্চারপাড়, পঞ্চপীর, পাখাডুবি, বনগ্রাম, বালিয়া, বাউসী, হোসনাবাদ, পাটাবুগা, পুঠিয়ারপাড় ও বগারপাড় গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ এ নামাজে অংশ নেয়।
বগুড়া
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার রেল স্টেশনের একটি মাঠে অর্ধশত মুসল্লি আজ সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়া ধনুট উপজেলার হাসুখালী গ্রামে এবং সোনাতলা উপজেলার কালাইঘাটা গ্রামের কয়েক বাড়ির মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন।
মুসল্লিদের দাবি, পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা হারাম। সারা পৃথিবীতে ঈদ হচ্ছে, সে হিসেবে আমরাও পালন করছি। এর আগেও ঈদ পালন করেছি। বগুড়ার গাবতলী মডেল থানা পুলিশের ওসি আশিক ইকবাল বলেন, বেশ কয়েকজন মুসল্লি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী আজই ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।
রংপুর
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে ১২০টি পরিবার। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলরা বড়বিল ইউনিয়নের বাগপুর পূর্ব মৌলভীপাড়া জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আর এতে ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুল বাতেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বাগপুর পূর্ব মৌলভীপাড়া গ্রামের মাওলানা আব্দুর রশীদ বাদশা ঈমাম হয়ে ২০ থেকে ৪০ জন মুসল্লিকে সঙ্গে নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা এবং ঈদ উদযাপন শুরু করেন। তখন থেকেই এলাকাটিতে এ নিয়ম চলে আসছে।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় জেলার সহিহ হাদিস সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের মধ্যপাড়ায় নামাজ আদায় করেন।
ঈদের নামাজে ইমামতি ও খুৎবা পাঠ করেন হাফেজ মোহাম্মদ ওমর ফারুক। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে গ্রামটিতে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
দিনাজপুর
দিনাজপুরের অন্তত ৫০ জায়গায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে রোববার সকাল ৭টায় দিনাজপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি করেন ফ্যামিলি কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক।
আয়োজক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেলায় এবার ৫০টির অধিক জায়গায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বোচাগঞ্জ উপজেলার ছাতইর, বিরলের ভাড়াডাঙ্গি, কাহারোলের জয়নন্দ, বিরামপুরের জোতবানি, চিরিরবন্দর এলাকায় ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের ৫ উপজেলার ৫টি গ্রামে প্রায় সহস্রাধিক নারী-পুরুষ,শিশু কিশোর ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। রোববার সকালে ৯টায় জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকের ছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা ও ছিট পাইকের ছড়া গ্রামের নারী-পুরুষ ঈদের নামাজ আদায় করেন।
এছাড়াও ফুলবাড়ি উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাঝিটারী, রাজিবপুর উপজেলার করাতিপাড়া মদিনাতুল উলুম মডেল মাদ্রাসা মাঠ, চিলমারী উপজেলার অস্টমীরচর ইউনিয়নের হাজিপাড়া দারুসুন্নাহ মাদ্রাসা ও ইতিম খানা ঈদগা মাঠ এবং রৌমারী উপজেলার গয়টাপাড়া গ্রামে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন কয়েকটি গ্রামের মুসল্লিরা। রোববার সকাল ৮টায় উপজেলা শহরের ফুটবল মাঠ এলাকায় এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা রেজাউল ইসলাম।
মুসল্লিরা জানায়, সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে রেখে তারা কয়েক বছর ধরে ঈদ জামাতের আয়োজন করে আসছেন। এবারও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চোরকোল, শ্যামনগর, যাদবপুর, হরিণাকুন্ডু উপজেলার দখলপুর, নারায়নকান্দি, বৈঠাপাড়া, বোয়ালিয়া, চটকাবাড়ীয়া, পারফলসী, পায়রাডাঙ্গা এবং শৈলকুপা উপজেলার ভাটইসহ জেলা শহর থেকে আগত মুসল্লিরা এ ঈদের নামাজ আদায় করেন।
বরিশাল
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বরিশালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাহবাদ জাহাগীরিয়া শাহসুফি দরবার শরীফের অনুসারীরা। আজ রোববার সকাল ৯টায় নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ডে তাঁজকাঠী হাজী বাড়ী শাহসুফি জাহাগীরিয়া জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, নগরীর ৭টিসহ এবং বিভাগের ৭৩টি মসজিদে ঈদ উল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভাগের অন্তত ২০ হাজার পরিবারের ১ লাখ মানুষ প্রতি বছর এভাবে আগাম ঈদ উদযাপন করেন।
পটুয়াখালী
মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশের সঙ্গে সংগতি রেখে পটুয়াখালীর ৩৫টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি মুসলমান আজ আগাম ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এইসব গ্রামে রোজা, ঈদ-উল ফিতর এবং ঈদ-উল আযহা পালিত হয়ে আসছে।
পটুয়াখালীর যেসব জায়গায় আগাম ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে—পটুয়াখালী সদর, গলাচিপা, বাউফল ও কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আজ ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার বদরপুর ও ছোট বিঘাই, গলাচিপার সেনের হাওলা, পশুরিবুনিয়া, নিজ হাওলা, কানকুনি পাড়া, বাউফলের মদনপুরা, শাপলাখালী, রাজনগর, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদী, চন্দ্রপাড়া, দ্বি-পাশা, কনকদিয়া, সাবুপুরা, বামনিকাঠী, বানাজোড়া, আমিরাবাদ এবং কলাপাড়ার দক্ষিণ দেবপুর, পাটুয়া, মরিচবুনিয়া, নাইয়া পট্টি, নিশানবাড়িয়া, শাফাখালী, তেগাছিয়া, ছোনখোলা ও বাদুরতলী উল্লেখযোগ্য।
বদরপুর দরবার শরীফের সেঝ পীর আলহাজ্ব শাহ সায়েদ আরিফ বিল্লাহ রাব্বানী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের সঙ্গে সংগতি রেখে বদরপুর দরবার শরীফের পীর মাওলানা মো. গনি এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পীর মাওলানা মো. মোখলেসুর রহমানের অনুসারীরা গত ৮৩ বছর ধরে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগাম রোজা, ঈদ-উল ফিতর ও ঈদ-উল আযহা পালন করে আসছেন।
মাদারীপুর
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে মাদারীপুরের ২০ গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রবিবার সুরেশ্বরী মুরিদানরা ঈদ উদযাপন করছেন। প্রায় ১৪৮ বছর পূর্ব থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে আগাম রোজা ও ঈদ পালন করে আসছেন এসব গ্রামের মানুষ।
মাদারীপুরের যেসব জায়গায় আগাম ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে—সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের চরকালিকাপুর, মহিষেরচর, পূর্ব পাঁচখোলা, জাজিরা, কাতলা, তাল্লুক, খোয়াজপুর ইউনিয়নের চরগোবিন্দপুর, পখিরা, খোয়াজপুর, কালিকাপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর, হোসনাবাদ, ছিলারচর ইউনিয়নের রঘুরামপুর, আংগুলকাটা, হাজামবাড়ী ও শিবচর উপজেলার বাহেরচর, কেরানীরবাট, কালকিনি উপজেলার খাসেরহাটসহ ৩০ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ রবিবার ঈদ উদযাপন করছেন।