মানিকগঞ্জের একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন ঘিরে দুজন নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যকে মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই তাদের মারধর করা হয়।
গতকাল রবিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চবিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত দুইজন হলেন– মহিউদ্দিন খান মঞ্জু ও মিজানুর রহমান চৌধুরী রতন।
গত ১৮ জুলাই ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চবিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য পদে সরাসরি ভোটের মধ্য দিয়ে চারজন অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হন।
স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচনকে ঘিরে কয়েক দিন ধরে হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমানের সমর্থকদের সঙ্গে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের সমর্থকদের উত্তজনা বিরাজ করছিল।
গতকাল রবিবার ছিল সভাপতি পদে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হন দেওয়ান সাইদুর রহমান ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। বেলা একটার পর দুই পক্ষের লোকজন বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হতে থাকে। পুলিশ দু’পক্ষের লোকজনকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তর্কবিতর্ক শুরু হয়।
এদিন বেলা তিনটার দিকে ৯ জন সদস্যের মধ্যে ৭ জনের উপস্থিতিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসের সুপারভাইজার এবং নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার কামরুল ইসলাম সভাপতি পদে নির্বাচনের জন্য সভা শুরু করেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গে অভিভাবক সদস্য মহিউদ্দিন মঞ্জু ও মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলা থেকে নিচ তলার সভা কক্ষে আসার সময় জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি-জামায়াত স্লোগান দিয়ে দুই অভিভাবক সদস্যকে ছিনিয়ে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে যান।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হরিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপসী রাবেয়া বিদ্যালয়ে এসে ছাত্রলীগর নেতাকর্মীসহ বহিরাগতদের সেখান থেকে বের করে দেন।
এরপর প্রিসাইডিং অফিসার সভা শুরু করলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় তিনি নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন।
হরিরামপুর উপজলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরেই সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের পক্ষের লোকজন ও পুলিশ সদস্যরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচনে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে। নির্বাচনের দিন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে সংসদ সদস্যের লোকজন দুইজন অভিভাবক সদস্যক মারধর করেছে। নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় প্রিসাইডিং অফিসার নির্বাচন স্থগিত করেছেন।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও নির্বাচিত সদস্যরা আমাকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি নিজে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করিনি। চারজন অভিভাবক সদস্যসহ ৯ জন ভোটারের মধ্যে অধিকাংশরা যাকে সমর্থন করবেন তিনিই সভাপতি হবেন। আমিও এটিই চাই।
এ ঘটনায় আহতরা মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।