বাংলাদেশ ব্যাংকে দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে প্রধান অর্থনীতিবিদের পদটি শূন্য রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই পদে নিয়োগে নানা টালবাহানা চলার পর সম্প্রতি হঠাৎ করে গতি এসেছে। তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন ও প্রশ্ন।
জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান অর্থনীতিবিদ নিয়োগে আবেদন আহ্বান করে। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ৭ ডিসেম্বর। সব প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতেই নিয়োগ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। হঠাৎ করেই গত ২৭ মে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়।
ব্যাংকের একাধিক সূত্র বলছে, এই পদে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া এতদিন থেমে ছিল। সংশ্লিষ্ট ওই ব্যক্তির নাম সায়েরা ইউনূস। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক। এছাড়া তিনি ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমানের স্ত্রী।
জানা গেছে, সায়েরা ইউনূস আগামী ৩ জুলাই অবসরে যাচ্ছেন। তাই তার অবসরের আগেই তাকে প্রধান অর্থনীতিবিদের পদে বসানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেই অনেকের ধারণা। ব্যাংকের ভেতরে-বাইরে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
সূত্রগুলো আরও জানায়, সায়েরা ইউনূস এই পদে আবেদন করেছিলেন অন্যান্য প্রার্থীদের সঙ্গে। তবে এতদিন তার চাকরির মেয়াদ বেশি থাকায় প্রক্রিয়াটি ধামাচাপা দেওয়া হয়। এখন যেহেতু তার মেয়াদ কমে এসেছে, তাই দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া কেন দেরি হয়েছে, তা তার জানা নেই। এটি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজ।
প্রসঙ্গত, এর আগেও হাবিবুর রহমান এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে প্রধান অর্থনীতিবিদ ফয়সাল আহমেদ পদ ছাড়লে তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তাকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব নেন।
সরকার ইতিমধ্যে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী সব গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরের তথ্য চেয়েছে। সেখানে হাবিবুর রহমানের নামও রয়েছে।
এদিকে, নিয়োগ বোর্ডের এক সদস্য জানান, তার কাছে যে চারজন প্রার্থীর সিভি পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে সায়েরা ইউনূসও ছিলেন। তবে তিনি হাবিবুর রহমানের স্ত্রী, এই তথ্য তাকে জানানো হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো পক্ষপাতের সুযোগ নেই। সবকিছু নির্ধারিত নীতিমালার ভিত্তিতে হবে।”