নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা)প্রতিনিধি: কুমিল্লার নাঙ্গলকোটবাসী তাদের সংসদীয় আসনটি পূর্বাবস্থায় ফিরে চান। বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলার অবস্থান।
১৯৮৬ সালে এ উপজেলাটিকে একটি সংসদীয় আসনে রুপান্তিত করা হয়। যা কুমিল্লা-১১ আসন হিসাবে সংসদীয় আসনের মানচিত্রে স্থান পায়। এ হিসাবে পর পর কয়েকটি সংসদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
কিন্তু ২০০৮ সালের আসন পূনর্বিন্যাসের কারণে নাঙ্গলকোটের উন্নয়নে কালো ছায়া পড়তে থাকে। কুমিল্লায় আসন কমাতে গিয়ে কুমিল্লা-১১ আসনটি কুমিল্লা ১০ এ পরিণত করে নাঙ্গলকোটের সাথে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন যুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে পুরো সদর দক্ষিণ উপজেলাকে এ আসনে যুক্ত করা হয়। বর্তমানে এ আসনে লালমাই নামক আরো একটি নতুন উপজেলা যুক্ত হয়। ফলে এ আসনের সীমানা পরিধি হয় তিনটি উপজেলা নাঙ্গলকোট, লালমাই ও সদর দক্ষিণ।
এতে সংসদীয় আসনের ভৌগলিক সীমা রেখা হয়ে যায় অন্তত ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ। বর্তমানে তিনটি উপজেলার মিলে এ আসনের ভোটার সংখ্যা ৬লক্ষ ২১ হাজার ৯শত ২২ জন। এর মধ্যে নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ৭শত ২৮ জন। নির্বাচনের আগে চুড়ান্ত ভোটার তালিকায় এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।

আসনটির এলাকা নোয়াখালীর সেনবাগ এবং ফেনীর দাগনভূঞার পাশ থেকে কুমিল্লা শহরের কাছাকাছি পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশাল এলাকা জুড়ে সংসদীয় আসন হওয়ায় বিগত দিনে উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যাপক অনিয়মসহ দেখা দিয়েছিল স্থবিরতা। উন্নয়নে সৃষ্টি হয়েছিল চরম বৈষম্য। পিছিয়ে পড়েছে আর্থসামাজিক উন্নয়ন। জনসাধারণ বিভিন্ন কাজ কর্মে সংসদ সদস্যকে কাছে পেতেও অনেক ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছেন।
এদিকে নাঙ্গলকোটের সাথে লালমাই এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার কোন যাতায়াত বা ভৌগলিক সীমা রেখা নেই। নাঙ্গলকোটের যাতায়াত বা ভৌগলিক সীমা রেখা রয়েছে নাঙ্গলকোট- লাকসাম- কুমিল্লা- ঢাকা বা নাঙ্গলকোট টু চৌদ্দগ্রাম- ঢাকা- চট্রগ্রাম। এতে নাঙ্গলকোটের সাধারণ জনগণ এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
এসব কারণে দীর্ঘদিন থেকে এ আসনটি পুর্বাবস্থায় ফিরে পেতে নাঙ্গলকোট উপজেলাবাসী আন্দোলন সংগ্রাম, প্রতিবাদ সমাবেশ, নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে এ আসনটি ফিরে ফেতে নাঙ্গলকোটের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ¦ আবদুল গফুর ভূঁইয়া ২০১৩ সালে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন নং ৭১৩২/১৩ দাখিল করেন। মহামান্য হাইকোর্টে ২০১৭ সালের ২০ মার্চ এর রায় প্রদান করেন। রায়ের খসড়া গেজেট অনুযায়ী নাঙ্গলকোটকে একটি স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন হিসাবে নির্ধারণ করা হয়।
এরপরও বিগত পতিত সরকারের নির্বাচন কমিশন রহস্যজনক কারণে কুমিল্লা-১১ (নাঙ্গলকোট) আসনটি পুর্বাবস্থায় ফিরে দেওয়ার কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। বর্তমানে নাঙ্গলকোটের সর্বস্তরের মানুষ এ আসনটি আগের অবস্থায় ফিরে পেতে চান। কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এ নিয়ে অচিরেই আন্দোলন সংগ্রামের কঠোর কর্মসূচি আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুমিল্লা-১১ (নাঙ্গলকোট) স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন পুনর্বহাল সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক মাজহারুল ইসলাম ছুপু চেয়ারম্যান বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন কমিশনের নিকট নাঙ্গলকোট উপজেলাকে পুর্বের ন্যায় স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন হিসাবে ঘোষনার দাবী রাখছি। নতুনা উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ তাদের প্রাণের এ দাবী বাস্তবায়নে কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে।
সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক, নাঙ্গলকোট উপজেলা শাখার সভাপতি ও নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাব সভাপতি মজিবুর রহমান মোল্লা বলেন, ভোগান্তি দুর করা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে নাঙ্গলকোটের আসনটি পুনর্বহাল করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই তিনি নির্বাচন কমিশনের নিকট আসনটি পুর্বাবস্থায় ফিরে পাওয়ার দাবী জানান।
নাঙ্গলকোট আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবদুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত সরকার আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনার লক্ষ্যে মানুষের মতামত যাচাই না করে নাঙ্গলকোটের সাথে সদর দক্ষিণ উপজেলাকে সংযুক্ত করে বিশাল একটি সংসদীয় আসন গঠন করে। আসনটি অনেক বড় হওয়ায় যাতায়াত সমস্যা, সাংগঠনিক কর্মকান্ডসহ উন্নয়নে অনেক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।
রাশেদ হোসাইন