ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে পদ্মা সেতু ও মেট্রো রেলের মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হতো না।
আজ শুক্রবার হলি আর্টিজানে হামলার পর উদ্ধারে অভিযানে নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে নির্মিত ‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্যে শুক্রবার শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ছয় বছর পূর্তিতে নিহত দেশি-বিদেশিদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন ডিএমপি কমিশনার।
শহিদের স্মরণে ডিএমপি কমিশনার বলেন, হলি আর্টিজানের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরে যদি আমরা ঘুরে দাঁড়াতে না পারতাম তাহলে আজ যে পদ্মা সেতু দেখছি, মেট্রোরেল দেখছি তা কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারতাম না। তখন হয়ত দেশের চিত্রটা অন্যরকম হতো; ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে কোনো বিদেশি টেকনিশিয়ান-ইঞ্জিনিয়ার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে আসত না।
তিনি দাবি করেন, নব্য জেএমবির সদস্যদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকলেও হলি আর্টিজানের ঘটনার পর ধারাবাহিক অভিযানে জঙ্গিদের রুখে দিতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দেশে এখনো জঙ্গি তৎপরতা রয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এখনো কিন্তু তাদের তৎপরতা মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে। আমরা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতে মনিটর করছি। মাঝে মাঝে কিন্তু আপনারা দেখবেন, আমাদের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ), আমাদের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি) বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে এই জঙ্গিদের গ্রেফতার করছে। তাদের যে নেটওয়ার্ক তৈরি করার চেষ্টা সেটা শুরুতেই আমরা নস্যাৎ করে দিচ্ছি।’
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার আফগান ফেরত মুজাহিদদের হাত ধরে। এরপর যখন ইরাকে আইএসের তৎপরতা শুরু হল তখন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বাংলাদেশের কিছু মানুষ কানাডাফেরত তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে দলবদ্ধ হল।’
হলি আর্টিজান পরবর্তী সময়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পাওয়ার কথা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘হলি আর্টিজানে হামলার পর বাংলাদেশ পুলিশ জঙ্গি দমনের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট নামে বিশেষায়িত ইউনিট তৈরি করে। ওই ইউনিটের বেশিরভাগ সদস্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। সেখান থেকে অস্ত্র ও তাদের যে প্রটেকটিভ গিয়ার সেগুলোও যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমাদের সরবরাহ করেছেন। এসব সরঞ্জাম পাওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে আমাদের সিলেট, মৌলভীবাজার এমনকি খুলনা বিভাগেরও কয়েকটি জেলাসহ যেখানেই আমরা খবর পেয়েছি… পুরো জঙ্গি নেটওয়ার্কে তখন যারা ছিল আমরা তছনছ করে দিয়েছি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিগোষ্ঠী হামলা চালায়। এতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২২ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হন। এই সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই নির্ভীক কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি মো. সালাহ উদ্দিন খান।
তাদের স্মরণে ও হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে পুরাতন গুলশান থানার সামনে ২০১৮ সালের ১ জুলাই ‘দীপ্ত শপথ’ নামে একটি ভাস্কর্য উদ্বোধন করেছিলেন ডিএমপি কমিশনার
এই হামলার ষষ্ঠ বছরে নিহতদের স্মরণে সকাল ১১টায় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পুরাতন গুলশান থানার ‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্যে নিহতদের স্মরণে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান ডিএমপি কমিশনার।
এছাড়াও ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এসবির মহাপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামসহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ বিদেশি কূটনীতিকরা।