আব্দুল্লাহ আল আলীম, দেবিদ্বার প্রতিনিধি:
কুমিল্লা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবীদ্বার উপজেলা সদর থেকে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ অংশের সড়কটি সিএনজি-অটোরিক্সা, অ্যাম্বুলেন্স মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ড হিসেবে ইজারা দিয়েছেন দেবীদ্বার পৌরপ্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজি চক্রবর্তী। স্ট্যান্ডটি ইজারা না দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা থাকলেও নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীরা।
গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পৌর প্রশাসকের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ওই নির্দেশনা দেয়া হয়। এ সংবাদে স্থানীয় সিএনজি চালকদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে কয়েকজন সিএনজি চালকের অভিযোগ, তাদের থেকে গত ২ মাসের জিপি দাবী করেন এবং সিএনজি-অটোবাইকের জন্য পৌরসভার নির্ধারিত টোকেন ২০ টাকা হলেও ইজারাদাররা ৫০-৮০ টাকা করেও আদায় করছেন। এমনকি বার্ষিক রেজিস্ট্রেশন ফি ৩ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক আদায় করা হয়। এ ফি না দেওয়া হলে মারধর ও সড়কে উঠতে দেননা।
দেবিদ্বার পৌর প্রশাসক ও উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলতি বছরের ৬টি স্ট্যান্ডের জন্য গত ১০ জানুয়ারী আহবানকৃত দরপত্রের মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ মূল্য ছিল ৭৩ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা এবং ভ্যাট ও করসহ ৯১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। সর্বেচ্চ দরপত্র আহবানকারীদের পৌর এলাকার সিএনজি-ইজিবাইক স্ট্যান্ড, দেবীদ্বার কার-মাইক্রো অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডগুলো কুমিল্লা-সিলেট হাইওয়ে সড়ক সংশ্লিষ্ট দেবীদ্বার পুরাতন বাজার থেকে-ওয়াহেদপুর সিএনজি-ইজিবাইক স্ট্যান্ড, দেবীদ্বার জেলা পরিষদ মার্কেটের উত্তর গলি থেকে কোম্পানীগঞ্জ রোডের সিএনজি-ইজিবাইক স্ট্যান্ড, দেবীদ্বার নিউমার্কেট রহমানিয়া সুপার মার্কেটের সামনে হতে কুষ্ণপুর রোডের সিএনজি- ইজিবাইক স্ট্যান্ড, দেবীদ্বার ফুলগাছ তলা থেকে খলিলপুর রোডের সিএনজি-ইজিবাইক স্ট্যান্ড, দেবীদ্বার কার-মাইক্রো অ্যাম্বুলেন্স সরকারী হাসপাতাল গেইট স্ট্যান্ড, দেবীদ্বার-চান্দিনা রোডস্থ বিআরডিবি আওতাভুক্ত ইউসিসির জায়গায় সিএনজি- ইজিবাইক স্ট্যান্ড ইজারা প্রদান করা হয়েছে।
এ ৬টি স্ট্যান্ডের মধ্যে দেবিদ্বার-চান্দিনা সড়কের বিআরডিবি’র আওতাভুক্ত ইউসিসির স্ট্যান্ড ছাড়া বাকি সবগুলোই কুমিল্লা- সিলেট হাইওয়ে সড়কের উপর প্রতিষ্ঠিত হলেও স্ট্যান্ডের নাম পাল্টে ইজারা দেয়া হয়েছে। ওই ৫টি স্ট্যান্ড নিউমার্কেট থেকে সরকারী হাসপাতাল ও থানা গেইটের পাঁচশ গজের মধ্যে স্ট্যান্ডগুলোর অবস্থান।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, স্ট্যান্ডগুলি ইজারার নিয়মবহির্ভূত একাধিক জায়গা হতে জিপি টোকেনমানির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। এসব হাইওয়ে সড়কে যানজটের ভোগান্তি এড়াতে দেবিদ্বার পৌর সভার ছয়টি স্ট্যান্ডের জন্য গত ২ জানুয়ারী নতুন করে পৌর কর্তৃপক্ষ ইজারা বিজ্ঞপ্তির আহবান করে। ওই ইজারার বিরুদ্ধে দেবীদ্বার পৌর এলাকার দক্ষিণ ভিংলাবাড়ী গ্রামের মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে মো.সোহেল রানা নামে এক ব্যবসায়ী উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। গত ৯ জানুয়ারী উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করলে বিচারপতি জাফর আহেমদ ও বিচারপতি মো. বশিরুল্লাহর সমন্বিত বেঞ্চ আবেদনের শুনানি শেষে ওই ৬টি স্ট্যান্ড ইজারাদানের কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের ওই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে দেবীদ্বার পৌর এলাকার তরিকুল ইসলাম সুমন নামে এক ইজারাদারের সুপ্রিম কোর্টে সিভিল পিটিশনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট ঘোষিত স্থগিতাদেশটি ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। যার মেয়াদ ৩১ জানুয়ারী থেকে (২৭ মার্চ পর্যন্ত) ৮ সপ্তাহ বহাল থাকবে।
সুপ্রিম কোর্ট দরপত্রের উপর ৮ সপ্তাহ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার অর্থাৎ পূর্বের রায় স্থগিত করলেও হাইওয়ের সড়কের উপর ইজারা প্রদানের কোন দিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি। সোহেল রানার রীট আবেদনে হাইকোর্ট থেকে গত ৯ জানুয়ারী ইজারা প্রদান স্থগিত করলেও, স্থগিতাদেশের ১দিন পর অর্থাৎ ১০ জানুয়ারী আহবানকৃত দরপত্রের আলোকে ওই ইজারা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা সমন্বয় কমিটি এবং আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে জনভোগান্তি, অতিরিক্ত টোল আদায় এবং হাইওয়ে সড়কে যানজট নিরসনে সর্বসম্মতিক্রমে ইজারা প্রদান স্থগিত করা হয়েছে। পৌরসভা থেকে যেহেতু পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাই তাকেও হাইওয়ে সড়কের উপর ইজারা না দেয়ার আহবান করেছি। কিন্তু তিনি হাইওয়ে সড়কেই ৫টি স্ট্যান্ড ইজারা দিয়েছেন।
এ নিয়ে পৌরপ্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তীকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি৷
পৌর সচিব মো. ফখরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। বরং তথ্য জানতে তথ্য প্রযুক্তি আইন অনুযায়ী আবেদন করতে বলেন।