কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজায় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। ড্রেজার ও বলগেট ব্যবহার করে নদী থেকে বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। স্থানীয়রা বলছেন, এই কর্মকাণ্ডের পেছনে রয়েছে রাজশাহী, পাবনা, নাটোর ও কুষ্টিয়ার একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী চক্রের ছত্রছায়া, যারা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকাজুড়ে ভীতি সৃষ্টি করে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সময় এই বালু ব্যবসার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ পড়েছেন ভয়ানক ঝুঁকিতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ত ভূমিকাই এই অবৈধ চক্রকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
স্থানীয় এক বালু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আগে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এই বালু তুলত, এখন অন্য একটি গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আমরা কিছু বলতেও পারি না, কারণ এখানে প্রশাসনই দুর্বল—কেউ নিরাপত্তা দিতে পারে না। বৈধ ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, শুনেছি নৌ পুলিশ ও স্থানীয় থানা পুলিশ নিয়মিত অর্থ নিচ্ছে এই অবৈধ বালু ব্যবসা থেকে। তাই তারা দেখেও না দেখার ভান করে।”
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার এস.এম. সালাউদ্দীন আহমেদ ওরফে শামীম সরকারের মালিকানাধীন ‘মেসার্স সরকার ট্রেডার্স’ নামের প্রতিষ্ঠানটি মূলত রাজশাহীর লক্ষীনগর মৌজায় বৈধ ইজারা পেয়েছে ২৪ একর এলাকায়। কিন্তু তারা তা লঙ্ঘন করে কুষ্টিয়ার মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজায় প্রবেশ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটে গত ১১ জুলাই ২০২৫, যখন শামীম সরকারের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী স্পিডবোর্ডযোগে এসে ভেড়ামারা উপজেলার ফয়জুল্লাহপুর ঘাটে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুলিতে স্থানীয় আমরুল গাইন আহত হন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও (মামলা নম্বর-৬, তারিখ-১১/০৭/২০২৫) এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে রয়েছে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত কোটি কোটি টাকার রক্ষা বাঁধ।
স্থানীয়দের দাবি—চৌদ্দহাজার মৌজায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ বিষয়ে ‘মেসার্স সরকার ট্রেডার্স’-এর অপর মালিক এস.এম. একলাস আহমেদ জানান, “আমি শুধু রাজশাহীর বাঘায় ইজারা নিয়েছি। কেউ যদি অন্য জেলায় গিয়ে বালু উত্তোলন করে, সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। আমি বিষয়টি দেখছি। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
স্থানীয় এলাকার মানুষ এখন প্রশ্ন রাখছেন—হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকতেও যদি এমন প্রকাশ্য অবৈধতা চলে, তবে ন্যায়বিচার কোথায়? প্রশাসনের নীরবতা কেন? এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করবে?