তুমুল আলোচনায় থাকা সিনেমা ‘হাওয়া’র ছাত্রপত্র বাতিল এবং প্রদর্শন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। ওই নোটিশে শালিক পাখি খাঁচায় বন্দি করা এবং মাংস খাওয়ার দৃশ্য দেখিয়ে বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি খুনের মাধ্যমে ভয়ংকর সহিংসতার দৃশ্য দেখানো, নারী চরিত্রকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন এবং অশ্লীল গালাগাল দেখানোর অভিযোগ করা হয়েছে।
উকিল নোটিশে হাওয়া সিনেমাটির ছাড়পত্র বাতিল করে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে প্রচার, সম্প্রচার ও প্রদর্শন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মকবুল হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান মহ. সাইফুল্লাহকে সোমবার এ নোটিস পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।
নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে, তা না হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেন্সরবোর্ড পুনর্গঠন করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্য, আইনজীবী ও পরিবেশবিদদের সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করতে বলা হয়।
এছাড়াও ভবিষ্যতে কোনো সিনেমার ছাড়পত্র দেওয়ার আগে চলচ্চিত্রে যেন সহিংসতাপূর্ণ খুনের দৃশ্য, অশ্লীল গালি এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের কোনো ধারার লঙ্ঘন না হয়, সে ব্যাপারে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখার বিষয়ে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে গত ২৯ জুলাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুক্তি পাওয়া মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ সিনেমায় ট্রলারে থাকা একটি খাঁচায় শালিক পাখি বন্দি অবস্থায় দেখা যায়। এক পর্যায়ে পাখিটিকে খাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে এতে।
‘হাওয়া’ সিনেমার ‘কয়েকটি দৃশ্যে’ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে দাবি করে এতে বলা হয়, “বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত এ ধরনের অপরাধের ফলে সাধারণ মানুষ পাখি শিকার, খাঁচায় পোষা ও হত্যা করে খাওয়ায় উৎসাহিত হবে। এই দৃশ্য ধারণের জন্য বনবিভাগের কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি। বন্যপ্রাণী হত্যা এবং খাওয়ার দৃশ্য দেখে মানুষ মনে করতে পারেন যে, এটা করা যায়। তারা এগুলো দেখে উৎসাহিত হতে পারেন।”
এছাড়া সিনেমা ও নাটকে ধূমপানের দৃশ্যে দেখানোর সময় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর লেখা থাকলেও ‘হাওয়া’ সিনেমার ওই অংশে এই ধরনের কোনো বার্তা ছিল না বলে নোটিসে অভিযোগ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, ‘হাওয়া’ সিনেমায় বেশ কয়েকটি খুনের দৃশ্য রয়েছে যা ‘অতি ভয়ঙ্কর তথা ভায়লেন্সপূর্ণ’।
“এছাড়া পুরো ‘হাওয়া’ সিনেমায় নারী চরিত্রকে নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি অসংখ্য অশ্লীল গালি ব্যবহার করা হয়েছে। যা পরিবারের সদস্যবৃন্দ, বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখা মোটেও উচিত নয়।”
এমন দৃশ্যের মাধ্যমে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা ‘প্রভাবিত হতে পারে’, যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।
“এই ধরনের চলচ্চিত্র শুধু বাংলাদেশেই নয় বর্হিবিশ্বেও প্রচার, সম্প্রচার ও প্রদর্শন হলে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জম্ম দেবে।”
যদিও আলোচিত এই চলচ্চিত্রের নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন বলেছেন, পাখিটির দৃশ্য ধারণের পরতারা প্রকৃতিতে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আর নৌকায় যে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে, সেটা কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে করা।
তবে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বলছে, পাখিটি খাঁচায় বন্দি করে দেখানোর মাধ্যমেই লঙ্ঘিত হয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন। সেই সঙ্গে পাখিটিকে রেঁধে খাওয়ার দৃশ্যও আইন লঙ্ঘন করেছে।