কাগজপত্রের জটিলতায় ফ্রান্সের প্যারিসের বিমানবন্দরে আটকেছিলেন তিনি। সেই থেকে পরের ১৮ বছর ধরে বসবাস করেছিলেন বিমানবন্দরেই। তিনি ইরানের মেহরান করিমি নাসেরি। ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত সেই নাসেরি আজ মারা গেছেন।
কূটনৈতিক জটিলতায় আটকে থাকা নাসেরি স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে শার্লস দ্য গল বিমানবন্দরের টু-এফ টার্মিনালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিবিসি জানায়, ১৯৮৮ সালে প্যারিসের এই বিমানবন্দরে বসবাস শুরু করেন নাসেরি। নিজেকে স্যার আলফ্রেড নামে পরিচয় দিতেন। বিমানবন্দরের লাল সোফায় বসে লিখতেন নিজের আত্মজীবনী। ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’ নামের সেই আত্মজীবনী ২০০৪ সালে বই হিসেবে প্রকাশ পায়। তাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করেন ব্রিটিশ লেখক অ্যান্ড্র ডনকিন।
বই অবলম্বনে সে বছরই ‘দ্য টার্মিনাল’ সিনেমা তৈরি করেন বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ। সিনেমাটিতে নাসেরির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দুইবারের অস্কারজয়ী অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস। ছিলেন অভিনেত্রী ক্যাথেরিন জেটা জোন্সও। ঘটনাবহুল নাসেরির জীবনের পুরো চিত্রই ওঠে এসেছে সিনেমায়।
১৯৪৫ সালে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের মসজিদে সোলেমান এলাকায় জন্ম নাসেরির। নিজের জিনিসপত্রের ট্রলি দিয়ে ঘেরা বেঞ্চে নাসেরি তার জীবন সম্পর্কে লিখে এবং বই ও সংবাদপত্র পড়ে দিন কাটাতেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে নাসেরির এই করুণ কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ১৯৯৯ সালে শরণার্থীর মর্যাদা পেলেও ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরেই ছিলেন নাসেরি।
‘দ্য টার্মিনাল’ সিনেমা থেকে সালে পাওয়া ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার পুঁজি নিয়ে একটি হোস্টেলে থাকতেন তিনি। চার সপ্তাহ আগে আবারও বিমানবন্দরে ফিরে আসেন। যেখানে তার ১৮টি বছর কেটেছে। সেখানেই থাকতে শুরু করেন।
বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, অসুস্থতার জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তার।