গত বছরের এই দিনটিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ এক জুলুমের শাসন ‘স্থগিত’ হয়– বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা মাওলানা ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন।
পোস্টে তিনি বলেন– অভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশের টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে যেভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামাল দিয়েছে, তা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসনীয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘সংস্কার’ ছিল ইউনূস সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য এই সংস্কার ছিল অত্যন্ত জরুরি। তবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ খাত যেন এই সংস্কার প্রকল্প থেকে বাদ না পড়ে, সে বিষয়েও সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া সংস্কারের পাশাপাশি তিনি বিতর্কিত কমিশনের প্রতিবেদন পুনর্মূল্যায়নের গুরুত্বও তুলে ধরেন। একই সঙ্গে জানান, একটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মূল্যবোধকে অগ্রাহ্য করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন– প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাব হলে ভবিষ্যতে আবারও কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। স্থগিত হওয়া জুলুমের শাসন যেন কোনোভাবেই ফিরে আসতে না পারে, এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
নতুন বাংলাদেশের জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিচ্ছন্ন ও প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক চর্চা দেখতে চায়। তারা আর কোনো হানাহানি, মারামারি বা বিভক্তি চায় না। জাতিকে বিভক্ত করার রাজনীতিতে কারোরই মঙ্গল নেই বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন সময়ের দাবী। একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশই পারে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে।
বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, স্বাধীনচেতা। তারা চায় স্বাধীনভাবে নিজেদের আদর্শ ও বিশ্বাস নিয়ে জীবনযাপন করতে। কোনো বৈদেশিক শক্তির আঞ্চলিক শাখা হয়ে যাওয়ার ধারণা তারা কখনোই মেনে নেবে না। তারা চায় যোগ্যতার ভিত্তিতে সবার কর্মসংস্থান নিশ্চিত হোক, কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হয়। তারা চায় নিরাপদ জীবন, প্রতিটি নাগরিক যেন রাস্তাঘাটে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারে।
সবশেষে ড. আজহারী মহান আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করে বলেন– “তিনি যেন আমাদের সঠিক পথে চলার শক্তি দেন, আমাদের উপহার দেন একজন যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ অভিভাবক। আমরা যেন দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন এক বাংলাদেশে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারি এবং বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি।”
তিনি আহ্বান জানান– ভেদাভেদ দূরে ঠেলে ঐতিহাসিক এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ আর জুলুমের চির অবসান ঘটিয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতেই হবে, ইনশাআল্লাহ।