রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫

৭ মাস পর কন্যার সন্তানের বাবা হলেন ঝালকাঠীর শহীদ সেলিম

মো. সাজ্জাত বিশ্বাস, ঝালকাঠি প্রতিনিধি
-বিজ্ঞাপণ-spot_img

হাসপাতালে নবজাতকের কান্নার সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয় স্বজন সবাই কেঁদে উঠলেন। নবজাতক জন্মের পরে আনন্দের পরিবর্তে শোকার্ত আহাজারি ও বিলাপে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। সবাই স্মৃতিচারণ করে শহীদ সেলিম তালুকদারের অনুপস্থিতি স্মরণ করেন। কারণ নবজাতক শিশু কখনো তার বাবাকে দেখতে পাবে না, যেই মানুষটা জুলাই বিপ্লবে শহীদ হয়ে গেছেন।

ছাত্রজনতার আন্দোলনে নলছিটির শহীদ সেলিম তালুকদারের (২৮) স্ত্রী সুমী আক্তারের ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে শনিবার (৮ মার্চ) রাত ৮টার দিকে। ঝলকাঠি শহরের একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে পায়।

নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম তালুকদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৩১ জুলাই নিহত হন। অথচ এর তিনদিন পরই ছিল (৪ আগস্ট) প্রথম বিবাহবার্ষিকী। ৮ আগস্ট পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার অন্তঃসত্ত্বা। এরপর কেটে গেছে সাতটি মাস।

শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সুমী আক্তারের শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে পায়, কিন্তু সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি সেলিম। মৃত্যুর সাত মাস সাতদিন পর সেলিমের উত্তরাধকিার আসল পৃথিবীতে। সেলিম একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হন। ৩১ জুলাই রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ২ আগস্ট সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয় সেলিমকে।

সেলিম নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সুলতান হোসেন তালুকদারের ছেলে। তিনি বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে আড়াই বছর আগে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি শুরু করেন। তারা তিন বোন ও এক ভাই। সেলিম ছিলেন মেজ।

সেলিমের স্ত্রী সুমী জানান, ওইদিন সকালে বাড্ডা লিংক রোডের কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন সেলিম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের মধ্যে আটকে পড়েন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন।

সুমী আক্তার বলেন, আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। তার স্মৃতি হিসেবে এই সন্তানই আমার কাছে থাকবে। আমার একটাই চাওয়া আমার সন্তানকে যেন কারও কাছে হাত পাতা না লাগে। আমি যতদিন বাঁচব শহীদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবে বাঁচব। সন্তানকে তার পরিচয় দেব।


ছেলের শোকে এখনো কাতর মা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, এখন যদি সেলিম বেঁচে থাকত তাহলে প্রথম সন্তান, কত আনন্দ পেত। তাও সেলিমের ভাগ্যে নেই। আমার ছেলের চিকিৎসার পেছনে প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ধার দেনা করে এসব টাকা জোগাড় করেছি। সেই টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। তিনি ছেলের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মাননা চান।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

মব সৃষ্টি করলে ওখানেই গ্রেপ্তার : তথ্য উপদেষ্টা

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, দেশে এখন থেকে কেউ মব জাস্টিস কিংবা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে ওই স্থান থেকেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার...

ঝালকাঠিতে বিদ্যুৎতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার প্রতাপ গ্রামে পুকুরে সেচ দিতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে রুবেল হাওলাদার (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (৯ মার্চ) দুপুরে প্রতাপ গ্রামের...

ধর্ষণের বিরুদ্ধে কুবিতে মানববন্ধন 

সারাদেশের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও (কুবি) ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার (০৯ মার্চ) বেলা একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের...

মহিলা জামায়াতের সমাবেশে বিএনপির হামলা

ঝিনাইদহের মহেশপুরে জামায়াতের নারী নেত্রীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা বাঁশবাড়িয়াা ইউনিয়ন কুল্লোপাড়া গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। জামায়াত নেতারা...

সম্পর্কিত নিউজ

মব সৃষ্টি করলে ওখানেই গ্রেপ্তার : তথ্য উপদেষ্টা

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, দেশে এখন থেকে কেউ মব জাস্টিস কিংবা...

ঝালকাঠিতে বিদ্যুৎতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার প্রতাপ গ্রামে পুকুরে সেচ দিতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে রুবেল হাওলাদার (৩২)...

ধর্ষণের বিরুদ্ধে কুবিতে মানববন্ধন 

সারাদেশের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও (কুবি) ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার (০৯ মার্চ) বেলা...
Enable Notifications OK No thanks