ঢাবি সংবাদদাতা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন কর্তৃক হিজাবী শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্থা এবং উগ্রবাদী বলে আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সাত দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর টিএসসি থেকে একটি মিছিল নিয়ে উপাচার্য কার্যালয়ে গিয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময়, ক্লাস, প্রেজেন্টেশন ও পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র নির্বিঘ্নে হিজাব-নিকাব পরিধান করার পরিবেশ নিশ্চিত, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ৩য় বর্ষের ভাইভা বোর্ডে নিকাব বা হিজাব পরিহিতাদের হেনস্থার সুষ্ঠু তদন্ত ও এর সাথে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া এবং হেনস্থার শিকার শিক্ষার্থীকে উগ্রবাদী আখ্যা দিয়ে তাকে বাসায় লেখাপড়া করতে বলা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামানের মন্তব্যের কারণে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ৩য় বর্ষের ভাইভা বোর্ডে নিকাব ও হিজাব পরিহিতাদের হেনস্থার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেখানে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উগ্রবাদী দলের সদস্য হিসেবে অপবাদ দিয়ে ভিক্টিম ব্লেমিং করেছেন এবং পর্দানশীন মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না এসে বাসায় পড়াশোনা করবে বলে রেসিস্ট মন্তব্য করেছেন।
যার ফলে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মেন্টাল ট্রমার শিকার হয়েছেন এবং নিকাব ও হিজাব পরিহিতাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।
তারা আরও জানান, কিছুদিন পূর্বে বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে দেয়া একটি নোটিশ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই নোটিশে পরিচয় শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার অজুহাতে সব ধরণের পরীক্ষা ও সংযোগ ক্লাসে, বিভাগের সকল শিক্ষার্থীকে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এই নোটিশের ফলে বিভাগের প্র্যাক্টিসিং মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়েছে। নোটিশের মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। মুসলিম হিসেবে আমরা এই ঘটনায় মারাত্মকভাবে ব্যথিত হয়েছি এবং এটিকে ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের দানা বেঁধেছে।
সমাবেশে উত্থাপিত এবং উপাচার্য বরাবর প্রদানকৃত স্মারকলিপিতে উল্লেখিত শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবিসমূহ হল-
১. শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ৩য় বর্ষের ভাইভা বোর্ডে পর্দানশীন শিক্ষার্থীদের হেনস্থা হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে এবং নিকাব পরিধান করায় ভাইভা না নেয়া শিক্ষার্থীর ভাইভা নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন কর্তৃক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উগ্রবাদী দলের সদস্য অপবাদ দিয়ে ভিক্টিম রেমিং করায় এবং পর্দানশীন মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না এসে বাসায় পড়াশোনা করবে বলে রেসিস্ট মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. বাংলা বিভাগকর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখা সংক্রান্ত নোটিশ বাতিল করতে হবে।
৪. পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় পরীক্ষার পূর্বেই নারী কর্মচারী কিংবা নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা রুমে হিজাব ও নিকাব পরিহিতাদের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৫. দ্রুততম সময়ে সকল অনুষদের সকল বিভাগে হিজাব-নিকাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্থা করা বন্ধে নোটিশ প্রদান করতে হবে।
৬. বিভিন্ন সময়ে ক্লাসরুমে, ভাইবা বোর্ডে অথবা পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করা অথবা কটূক্তির মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের শীলতাহানি করার মতো ঘটনাগুলো তদন্তপূর্বক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. হিজাব বা নিকাব পরিধানে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বিধিতে ধারা যুক্ত করতে হবে এবং ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ঘটনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় ফিরিয়ে এনে অথবা ভিন্ন উপায়ে ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করতে হবে।