প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে কারা ক্ষমতায় যাবে, তার সিদ্ধান্ত নিতে জনগণকে ক্ষমতা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনার ফলে এবং দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কারণে দেশে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। তাই এখন কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারছে না।’
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নব-নির্বাচিত মেয়র ও এর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সংবিধান লঙন করে ‘মার্শাল ল’ জারি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছে।
‘আমরা এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে আমাদের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে এসে গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি। এই গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শক্তিকে আরো দৃঢ় করা এবং ক্ষমতায় কে যাবে না যাবে জনগণই যেন তা নির্ধারণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা,’ বলেন তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আনয়নের ফলে দেশে একটা স্থিতিশীলতা এসেছে কারণ দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। এখন আর অনির্বাচিত কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারছেনা। যদিও সেটা দেশের তথাকথিত একশ্রেনীর বুদ্ধিজীবীদের অন্তর্জালার কারণ। তারা কোনদিন ভোটের জিততে পারবে না। রাজনীতি করতে পারবে না বা জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবার মত সাহস তাদের নেই। কোনমতে ক্ষমতায় কীভাবে যাবে তাই তারা সবসময় এই গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে। তাদের এই প্রচেষ্টা আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে একুশ বছর পর সরকারে এসে আওয়ামী লীগ ৫ বছর দেশ পরিচালনার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র ঘটনা। এছাড়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, জরুরী অবস্থা জারি বা ‘মার্শাল ল’ নানা ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তনই হয়নি।
তিনি বলেন, তার সরকারের গত ৩ মেয়াদের টানা শাসনের ফলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ বাংলাদেশ বদলে গেছে।
এ সময় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রস্তাবে নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে বাদ দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে নির্বাচন কমিশন আইন পাশসহ নির্বাচন কমিশনের ব্যয় নির্বাহের বিষয়টাও স্বাধীন করে দেয়া তার সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে শপথ বাক্য পাঠ করান এবং নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করান এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং অনুষ্টান সঞ্চালনা করেন সংশ্লিষ্ট মনন্ত্রণালয়ের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম। গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী মোস্তফা টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয়ী হন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সব নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অভিনন্দন জানিয়ে তাদের নিবেদিত প্রাণ হয়ে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
তার সরকারের ভূমিহীন-গৃহহীনকে ঘর করে দেয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ভূমিহীন-গৃহহীণ মানুষকে ঘর করে দেয়ার সময় কে কোন দলের তা দেখিনি। মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখেছি। মুজিবের এই বাংলায় একটি মানুষও গৃহহীণ-ভূমিহীন থাকবে না, তা তার সরকার নিশ্চিত করবে।
জনগণ যাতে সরকারের সেবা পায় তা নিশ্চিত করার জন্যই তিনি রংপুর বিভাগ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারি, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা এবং রংপুর অঞ্চল সবসময়ই ছিল দুর্ভিক্ষ বা মঙ্গা পীড়িত। সে জন্যই আমি চেয়েছি যে এখানে যদি একটা বিভাগ হয় এবং সেবা যদি জনগণের দোরগোড়ায় আমরা পৌঁছে দিতে পারি তাহলে মানুষ ভাল থাকবে। এরপর রংপুর সিটি কর্পোরেশন করে দিয়ে তার সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পেরও একটি খতিয়ান তিনি তুলে ধরেন।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৮টি প্রকল্পে মোট ১১৭৩ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘কে কোন দলের মেয়র সেটা কিন্তু দেখি নাই। আমরা কিন্তু মানুষের জন্যই কাজ করেছি। এটাই হলো বাস্তব কথা।’
তিনি এ সময় করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি তার আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন।