দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর চলতি বছর শুরু হয়েছে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা৷ পঞ্চম শ্রেণির এ বৃত্তি পরীক্ষার ফল তৈরিতে অবহেলা ও গাফিলতির দায়ে ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক ও তিন পরিচালককে শোকজ করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও সংস্থাটির কম্পিউটার সেলের প্রধান প্রকৌশলী অনুজ কুমার রায়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে বলে জানা গেছে৷
বুধবার এসব ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রশাসন, প্রশিক্ষণ এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের (আইএমডি) পরিচালক ও কম্পিউটার সেলের প্রধান বা আইএমডির প্রকৌশলীও এর মধ্যে আছেন। এদের মধ্যে ৪ জন সরাসরি জড়িত। আর দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাবে মহাপরিচালক জড়িত। চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে প্রথম ৪ জনকে শোকজ আর শেষের জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটিও এমন ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ সংক্রান্ত ফাইল বুধবার দুপুরের দিকে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন অনুমোদন করেছেন। এরপরই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুমোদিত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এই বৃত্তির ফল ঘোষণা করেন। এর ৪ ঘণ্টার মধ্যে কারিগরি ত্রুটির কারণ উল্লেখ করে ফল স্থগিত করে ডিপিই। ফল নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে ১ মার্চ রাত ১০টার পর সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। প্রায় সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষার্থী এবার বৃত্তি পেয়েছে। আর পরীক্ষা দিয়েছে ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ শিক্ষার্থী।
সূত্র জানায়, কমিটি বৃত্তির ফল তৈরির সঙ্গে জড়িত কারিগরি দলের অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে গাফিলতি পেয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, জেলা থেকে পাঠানো ফল সমন্বয়ের আগে সতর্কতার সঙ্গে কোড যাচাই করেনি। যেহেতু কম্পিউটারের যে কোনো প্রোগ্রাম কোড তৈরির মাধ্যমে চালাতে হয়। তাই কোডগুলোর দিকে নজর রাখলে সমস্যা এড়ানো যেত।
এছাড়া ফল তৈরির ক্ষেত্রে খাতার কোডিং এবং ডি-কোডিং প্রক্রিয়া থাকে। যেহেতু সারা দেশে জেলায় জেলায় আলাদা কাজ হয়েছে, তাই একই কোড কম্পিউটার সৃষ্টি করতে পারে, যা ম্যানুয়ালি ধরে ধরে যাচাই করা সম্ভব ছিল। আর এবারই প্রথম ‘ডিপিএমআইএস’ নামে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বৃত্তির ফল প্রস্তুত ও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সফটওয়্যারে কোডিং বিষয়টি মাথায় না থাকার কারণে এমনটা ঘটেছে। তবে সফটওয়্যারে কোনো কারিগরি ত্রুটি ছিল না।
তবে তদন্ত কমিটির কাছে কারিগরি দলের সদস্যরা দাবি করেন, ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও সরকারি কর্মকমিশনের ফলেও এমন সমস্যা হয়েছিল। আর দীর্ঘদিন পর ফল তৈরির সফটওয়্যার ব্যবহারে এ ভুল হয়েছে। বিশেষ করে সময় স্বল্পতা বড় সমস্যা তৈরি করেছে।