বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস মামলায় বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। চলমান জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এ আদেশ দেন। একইসাথে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ৫ এপ্রিল দিন ঠিক করে দিয়েছেন বিচারক।
এর আগে গত ৫ মার্চ ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব আহমেদের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছিলেন নিখিল রঞ্জন ধর।
সোমবার তার পক্ষের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার নিখিল রঞ্জনের জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, নিখিল রঞ্জন ধর প্রশ্নফাঁস করেননি। তার কাছ থেকে কেউ প্রশ্ন পায়নি বা নেয়নি। আর তিনি কোনো টাকাও নেননি। বয়স্ক মানুষ, নানা রোগে আক্রান্ত।
এ মামলার আসামি রবিউল যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে বলা হয়, প্রশ্নগুলো চুরির পর সে নিজে বাজারে বিক্রি করে। সুতরাং নিখিল রঞ্জন ধরের সম্পৃক্ততা নাই। আসামি দেলোয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই শিক্ষকের কথা যা বলেছে, তা ঠিক নয়। কারণ দেলোয়ার ঘটনাস্থলে ছিল না অথচ তার স্বীকারোক্তিতে এসেছে সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর বিরোধিতা করে বলেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং মামলায় তার জামিনের আবেদন খারিজ করে জেলে পাঠানো হোক।
শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে নিখিলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
২০২১ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকায় বিভিন্ন কেন্দ্রে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় করা মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রে নাম আসার পর নিখিল রঞ্জনের বিরুদ্ধে গত ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। এর আগে তাকে বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা।
গত ২৪ জানুয়ারি ওই অভিযোগপত্র জমার পরদিন ঢাকার মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রাষ্ট্রপক্ষের কাছে তিনি জানতে চান, অভিযোগপত্র থেকে বুয়েট শিক্ষক অধ্যাপক নিখিলকে কেন, কিভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। পরে অধিকতর তদন্ত করে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিতে নির্দেশ দেন বিচারক। এরপর ৩১ জানুয়ারি অধ্যাপক নিখিলের নাম অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে অভিযোগেপত্র দেন তদন্তকারী সংস্থা ডিবির কর্মকর্তা এসআই শামীম।
প্রশ্ন ফাঁস করে উত্তর বিক্রির অভিযোগে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক দেলোয়ার হোসেন, পারভেজ মিয়া ও প্রেসকর্মী রবিউল আউয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদে ‘চাঞ্চল্যকর’ তথ্য পাওয়ার কথা জানায় ডিবি। ওই তদন্তেই বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান নিখিল রঞ্জনের নাম আসে। পরে ২১ নভেম্বর তাকে বিভাগপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে বুয়েট প্রশাসন।
প্রশ্ন ফাঁসের ওই ঘটনায় সে সময় রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন (৩০), পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলন (৩৮) ও রাইসুল ইসলাম স্বপন (৩৬) এবং জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার অফিসার শামসুল হক শ্যামলকে (৩৪) গ্রেফতার করা হয়।
এরপর ২৪ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে ৩১ জানুয়ারি অধ্যাপক নিখিলের নাম অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে অভিযোগেপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত। তাদের মধ্যে অধ্যাপক নিখিল পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
অন্য আসামিরা হলেন- আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান রয়েল, অফিস সহায়ক (পিয়ন) দেলোয়ার হোসেন, কর্মী রবিউল আউয়াল, জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার কর্মকর্তা শামসুল হক শ্যামল, রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে-আলম মিলন, পূবালী ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জাবের ওরফে জাহিদ, পারভেজ মিয়া, মিজানুর রহমান মিজান, মোবিন উদ্দিন, সোহেল রানা, পরীক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম স্বপন, রাশেদ আহমেদ বাবলু, জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ ও রবিউল ইসলাম রবি।