সাভারের নিজ বাসা থেকে সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিরুদ্ধে।
তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে আমবাগান এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তবে স্থানীয় পুলিশ ও সিআইডির ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।
স্থানীয় এক সাংবাদিকসহ দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ভোর ৪টার দিকে তিনটি গাড়িতে করে মোট ১৬ জন শামসুজ্জামানের বাড়ির সামনে যায়। তাদের মধ্যে সাত-আটজন বাড়িতে প্রবেশ করে। একজন শামসুজ্জামানের বসার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। সেখানে ১০-১৫ মিনিট থাকার পর তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার সময় শামসুজ্জামানের বাসায় ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তারা দ্বিতীয়বার বাড়ি এসে জব্দকৃত মালামালের তালিকা তৈরি করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষে দাঁড়িয়ে তার ছবি তোলা হয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে তারা আবার বের হয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন ওই বাড়িতে তল্লাশির সময় দুবারই উপস্থিত ছিলেন।’
তুলে নেওয়ার সময় সিআইডি পরিচয়ধারীরা ওই বাড়ির মালিককে ডাকেন। বাড়ির মালিককে তাঁরা বলেন, শামসুজ্জামানের করা একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বটতলার নুরজাহান হোটেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তাপ্রহরী, শামসুজ্জামানসহ তাঁকে আটককারীরা সাহ্রি খান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘আমি আগে বিষয়টি জানতাম না। রাত দেড়টার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শামসুজ্জামানের ভাবি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, সেই পরিচয় দিয়ে তাঁরা আমাকে শামসুজ্জামানের বাসায় নিয়ে যান।’
শামসুজ্জামানকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার সময় আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক রাজু মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিষয়টি জানতে রাজু মণ্ডল ও আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামানের ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কল রিসিভ করেননি। ঢাকা জেলা (সাভার সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, তিনি এ বিষয়ে এখনো কিছু জানেন না। তাঁরা কাউকে গ্রেপ্তার করেননি।
আজ বুধবার সকালে সিআইডির ঢাকা বিভাগের উপমহাপরিদর্শক মো. ইমাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সিআইডির ঢাকা বিভাগ তাঁর দায়িত্বে। তাঁর বিভাগের কেউ শামসুজ্জামানকে আটক করতে যায়নি।