রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আহ্বান জানিয়েছেন, গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তোলে এমন যেকোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে আবদুল হামিদ এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, আসুন, সবাই সম্মিলিত প্রয়াসে প্রিয় মাতৃভূমি থেকে সংঘাত-সংঘর্ষ এবং যেকোনো উগ্রবাদ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থেকে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে শামিল হই।
জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেওয়া তার শেষ ভাষণে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে বিপন্নকারী যেকোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে আগামী ২৪ এপ্রিল। পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তিনি।
নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
জাতীয় সংসদকে গণতন্ত্র চর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি সরকারি ও বিরোধী উভয়পক্ষের সংসদ সদস্যদেরকে হিংসা-বিদ্বেষ, ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসে গঠনমূলক, কার্যকর ও সক্রিয় অংশগ্রহণের তাগিদ দেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ অধিবেশনে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও উপস্থিত ছিলেন।নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং বর্তমান রাষ্ট্র্রপতি আবদুল হামিদের সহধর্মিণী রাশিদা খানম অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেন।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, পৃথিবীর মানচিত্রে একটি আত্মমর্যাদাশীল, দেশপ্রেমিক জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়কে আমাদের ঐকান্তিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা দিয়ে সমুন্নত রাখতে হবে। দেশের উন্নয়নে আমাদের চিন্তা, কর্মপদ্ধতি ও কৌশল ভিন্ন হতে পারে কিন্তু হিংসা-বিভেদ নয়, স্বার্থের সংঘাত নয়- আমাদের মধ্যে সুগভীর ঐক্য থাকবে জাতীয় স্বার্থ ও দেশপ্রেমের প্রশ্নে।
‘ক্ষমতায় যাওয়া বা পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় নির্বাচন’,আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে জানান তিনি।
আবদুল হামিদ বলেন, আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতি কখনো দেশ, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না, বরং তা রাজনৈতিক পরিবেশকে তমসাচ্ছন্ন করে তোলে।
সংঘাত ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এসে গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে সবার সহায়তার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
তিনি সবাইকেই রাজনীতি থেকে হিংসা-হানাহানি অবসানের মাধ্যমে একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার আহ্বান জানান।
প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মহান সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের জনগণ নিরপেক্ষভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ ও বেগবান করবে বলে রাষ্ট্রপতি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
দীর্ঘ ৫০ বছরের সংসদীয় কার্যক্রম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে ৭ এপ্রিল একটি ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭৩ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় সংসদের ইতিহাস নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এই বিশেষ অধিবেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সংসদ সদস্যরা তাদের বক্তব্যে সংসদের ইতিহাসের পাশাপাশি সংসদ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর রীতিনীতি, কর্মকৌশল এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবেন।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তুলে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বিগত দেড় দশকে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সব যোগ্যতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও যোগ্য নেতৃত্বে বিগত দেড় দশকে দেশের প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তার নেতৃত্বেই দেশের গণতন্ত্র আজ নিরাপদ ও সুরক্ষিত।
বর্তমানে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধি ব্যতীত অন্য কোনো গোষ্ঠী বা অসাংবিধানিক শক্তির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ নেই বলেই সংসদকে জানান বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।