ববি প্রতিনিধি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বারবার গাছে আগুন লাগার ঘটনার বিষয়ে প্রক্টরের বক্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিকের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো.খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে। সাম্প্রতি মুক্তমঞ্চের পাশে ও শেখ হাসিনা হল গেটের সম্মুখে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার ঘটনার বিষয়ে প্রক্টরের মন্তব্য জানতে চান ক্যাম্পাসলাইভের ববি প্রতিনিধি মো. জাকির হোসেন। এসময় আগুন লাগার বিষয়ে মন্তব্য না করে পাল্টা সাংবাদিককে হেনস্থা করেন তিনি।
জানা যায়, গত সোমবার (২ মে) বিকাল চারটায় ক্যাম্পাসে আগুন দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। আগুন লেগে বিভিন্ন অংশের গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দীর্ঘক্ষণ আগুন জ্বলে কালো বর্ণ ধারণ করেছে আশপাশের গাছপালা। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে না পারলেও শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটর আগেও ঝোপঝাড় পরিস্কারের নামে আগুন দেয়া হয়েছে অনেকবার। যেসব জায়গায় অগ্নিকান্ড হয়েছে সেখানে চারা গাছ থাকায় সেগুলো আগুনে ঝলসে যায়। এর আগেও বারাবার আগুন লাগানোর ঘটনায় অসংখ্য চারা গাছ মারা গেছে। পরিবেশবিজ্ঞানী ও উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে আগুন দিয়ে গাছ পোড়ানো পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য হুমকি স্বরুপ৷।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম খান ইমন বলেন, আগুন লাগার ঘটনা নতুন কিছু না এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর আগেও কয়েকবার ঘাস পোড়ানো বা মাঠ পরিষ্কারের নামে গাছ পোড়ানো হয়েছে। অভিযোগ দিতে গেলে বিভিন্ন অযুহাত দেখানো হয়। কখনো কখনো বলা হয় যে সিগারেটের আগুন থেকে আগুন জ্বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রত্যেকবার ব্যবস্থা নিবে বললেও তারা একবারও কোনোরুপ ব্যবস্থা নেয় না। তারা প্রত্যেকবার সর্তকবার্তা দিয়ে ছেড়ে দেয়। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ও ঘাস পোড়ানোর নামে গাছ পোড়ানো হবে। গাছ পোড়ানোয় পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত আগুন দেয়ার সাথে জড়িত সকলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলমের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। আগুন কিভাবে লাগছে জানিনা৷ তবে ধারণা করা হচ্ছে বিড়ি, সিগারেটের মাধ্যমে আগুন লাগতে পারে৷ ক্যাম্পাসে ইতিপূর্বে একাধিকবার আগুন লাগার প্রশ্নে তিনি ওই প্রতিবেদকের সাথে রুঢ় ভাষায় বলেন, ‘তুমি কি জানো কে আগুন লাগিয়েছে? তোমার কাছে কি তথ্য আছে কে লাগিয়েছে? তুমি ইদানীং আজে বাজে নিউজ করো কেন? উদ্দেশ্য প্রণোদিত নিউজ করো কেন? স্টুডেন্ট হিসাবে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হয়। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিউজ করলে সন্মান খুব একটা বাড়ে না।৷ আমি বলছি তুমি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে নিউজ করো, পত্রিকায় এটা আমার নামে লিখে দিও।’”
আগুন দিয়ে গাছ পোড়ানো পরিবেশ ও জীবজন্তুর উপর কি ধরণের প্রভাব ফেলে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, প্রথমত আগুন দিয়ে গাছ পুড়ানো পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর।৷ আগুন ধোঁয়া ও জীবজন্তুর জন্য হুমকিস্বরূপ।৷ ক্যাম্পাসে আগে টিয়া পাখি দেখা যেত কিন্তু বারবার আগুন লাগানোর কারণে এখন এগুলো বিলীন হয়ে গেছে।৷৷ আমি মনে করি এই কার্যক্রমগুলো ক্যাম্পাসে একবারে উচিৎ নয়।৷ গ্রীন ক্যাম্পাসের বিনিমার্ণের সম্পূর্ণ বিপরীত৷
বিশ্ববিদ্যালয়ে জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, প্রথমত আগুন দিয়ে গাছ পোড়ানো এটি একবারে উচিৎ নয়৷। আগুন দিয়ে এমন আবর্জনা পোড়ালে এতে কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়ে পরিবেশ দূষণ করে। মানুষের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরণের রোগ সৃষ্টি করে।৷গাছ লাগানোর পরিবর্তে যদি গাছ পুড়িয়ে ধ্বংস করা পরিবেশের শত্রুর কাজ৷ তবে এসব যারা দেখভাল করে এসবের রোধে তাদের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ৷
চলতি বছরের ৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু হলের সামনের আবর্জনা স্তুপ পোড়ানোর নামে গাছ পোড়ানো হয়৷সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করেন, সাপ তাড়ানোর জন্য আগুন দেওয়া হয়েছে৷ এর কিছুদিন পূর্বে ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সিগারেটের আগুন থেকে এর সূত্রপাত বলে ধারণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদিও সিগারেটের আগুন এরকম অগ্নিকান্ড ঘটা অসম্ভব।
এছাড়া ২০২০ সালে ১ ফেব্রুয়ারী মাঠ পরিষ্কার কর্মসূচি নাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর মো. নুর ইসলামের নেতৃত্ব একদল কর্মচারী কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের এক কোনে আগুন দেয়। এতে শহীদ মিনারের আশে-পাশে ও মুক্তমঞ্চের পাশে লাগানো প্রায় অর্ধ-শতাধিক চারাগাছ পুড়ে যায়৷ ক্যাম্পাসে প্রায় এমন আগুন লাগার ঘটনা ও গাছ পোড়ানোর ঘটনায় কখনো কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।