রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন ‘রক্তপাত এড়াতে’ তার অনুগতদের মস্কোমুখী যাত্রা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি নিজে বেলারুশে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে রাজি হয়েছেন। শনিবার (২৪ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
এক অডিও বার্তায় প্রিগোঝিন এই ঘোষণা দিয়েছেন। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে আলোচনার পর তিনি এই ঘোষণা দেন।
বেলারুশ প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো বলেছেন, ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের মস্কো যাওয়া বন্ধ করতে তিনি প্রিগোঝিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
তবে প্রিগোঝিনের এই ঘোষণার মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাজনৈতিক জীবনে নেমে আসা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চের অবসান হলো বলে ধারণা করা হয়েছে।
শনিবার ওয়াগনার প্রধান বিদ্রোহ ঘোষণা করে মস্কো অভিমুখে রওনা দিলে রাশিয়াজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ শাসনামলে এটিই সবচেয়ে বড় হুমকি। মস্কো অভিমুখে রওনা দেওয়ার আগে ওয়াগনার সীমান্তের একটি শহরের সেনা সদর দফতর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, ওয়াগনার যোদ্ধাদের মস্কোর দিকে অগ্রসর না হয়ে ফেরত আসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রিগোঝিন। তাদেরকে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরতে বলা হয়েছে।
প্রিগোঝিন দাবি করেন, তার যোদ্ধারা গত ২৪ ঘণ্টায় মস্কোর দিকে ২০০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছিল।
রুশ সম্প্রচারমাধ্যম রসিয়া ২৪ জানিয়েছে, লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে আলোচনায় প্রিগোঝিন মস্কোর দিকে অগ্রসর না হতে এবং উত্তেজনা প্রশমনে রাজি হয়েছেন।
লুকাশেঙ্কোকে উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়েছে, ওয়াগনার যোদ্ধাদের মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হওয়া থামাতে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন প্রিগোঝিন। উত্তেজনা নিরসনে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া সম্ভব।
রসিয়া ২৪ জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এতে সম্মতি দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে ক্রেমলিনের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নতুন কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায় যে প্রিগোঝিন ও তার বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রোস্তভ-অন-ডন ত্যাগ করছে।
এদিকে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের সাথে করা চুক্তির ব্যাপারে ক্রেমলিন খুব বেশি কিছু বলছে না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন, প্রিগোঝিনকে প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘কথা দিয়েছেন’ যে তিনি বেলারুশে যেতে এবং সেখানে বসবাস করতে পারবেন। আর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করা হবে।
এর আগে রাশিয়ার রাজধানী দখলের উদ্দেশ্যে লিপেৎস্ক থেকে ২০০ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়েও আচমকা থমকে যায় প্রিগোঝিনের ভাড়াটে সেনাবাহিনী। কারণ হিসাবে জানানো হলো, রক্তপাত এড়াতেই আপাতত মস্কো অভিযান স্থগিত। ভাড়াটে সেনাবাহিনীর প্রধান প্রিগোঝিন নিজের টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, রক্তপাত এড়াতেই মস্কো দখলের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিবিসি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বেলারুসের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা হয় ভাড়াটে সেনাবাহিনীর প্রধান প্রিগোঝিনের। তার পরেই প্রিগোঝিন মস্কোর দিকে ধাবমান সেনাসদস্যদেরকে ফিরে আসার নির্দেশ দেন।
চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে বড় অভিযান শুরু করে বিদ্রোহী ওয়াগনার বাহিনী। প্রিগোজিনের মালিকানাধীন ভাড়াটে যোদ্ধারা শনিবার সকালে ইউক্রেন সীমান্তের অদূরে পশ্চিম রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর ভোরোনেজ দখল করে বলে কয়েকটি পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছে। এর আগে ওয়াগনার বাহিনী শুক্রবার ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া রোস্তভ-অন-ডন শহরের দখল নিয়েছিল। প্রিগোজিন দাবি করেছেন, একটি গুলি খরচ না-করেও রোস্তভ-অন-ডন শহরে সেনার সদর দফতর দখল করে তার বাহিনী। আর এতে সহায়তা করেছেন স্থানীয়রা। তিনি একটি অডিও-বার্তা দিয়ে জানিয়েছিলেন, গোটা দেশের তার বাহিনীকে সমর্থন করা উচিত। কারণ তার বাহিনী ‘ন্যায়ের পদযাত্রায় নেমেছে। রোস্তভ-অন-ডন থেকে মস্কোর দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার। এর পর মস্কোর দিকে আরো ২০০ কিলোমিটার এগিয়ে যায় তারা।