ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে তেলবাহী সাগর নন্দিনি-২ জাহাজে দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণে আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে। ১৪ জনের মধ্যে ১২ জন পুলিশ সদস্য এবং দুইজন জাহাজের কর্মচারী। জাহাজটিতে পর পর দুই দিনের বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১৯ জন দগ্ধসহ ৪ জন নিহত হলেন।
সর্বশেষ সোমবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যায় বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন এবং ১১ জন ঝালকাঠি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।
আহত ১২ পুলিশ সদস্যরা হলেন, কনস্টেবল শওকত, দ্বীপ, পলাশ মোল্লা, মেহেদী, নকীব, সাইফুল, লিপন গাইন, এএসআই গণেশ, এসআই আব্দুলদ হাকিম, নায়েক সিদ্দিক, এসআই মোস্তফা কামাল ও এটিএসআই হেলাল উদ্দিন।
ঝালকাঠি সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রথম দফায় দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার পর তেল অপসারণের সময়ে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত অবস্থায় বিস্ফোরণে পুলিশ সদস্যরা আহত হন।
এছাড়া জাহাজের একজন সুকানী শরিফ আহমেদ এবং আরেকজন বাবুর্চি আহত হয়েছেন। গুরুত্বর আহত শরীফকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, শেবাচিমে আসা তিনজনের শরীর ৫ থেকে ১০ শতাংশ পুড়েছে।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে নোঙর করে থাকা অবস্থায় ১ জুলাই প্রথম দফায় বিস্ফোরিত সাগর নন্দিনি-১ জাহাজ থেকে সাগর নন্দিনি-৪ জাহাজে তেল অপসারণ করা হচ্ছিল। তেল অপসারণের সময় সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরিত হয় সাগর নন্দিনি-২।
দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যাওয়ার প্রায় ৯ ঘণ্টা পার হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না উদ্ধারকারী বাহিনীগুলো। নৌ-বাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএর ১১টি ইউনিট সর্বশক্তি দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও আগুনের স্ফুরণ কমাতে পারছে না। বরং অস্বাভাবিক রকমের কুণ্ডলী পাকিয়ে জ্বলছে সাগর নন্দিনি-২ জাহাজ।
উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া সংস্থাগুলোর কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ধারণা করা হচ্ছে জাহাজে থাকা প্রায় ৫ লাখ লিটার জ্বালানি তেল পোড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশ না করলেও দুইজন কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু জাহাজটির জ্বালানি ট্যাংকারে আগুন লেগে গেছে সেহেতু এ অবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত তেল পুড়ে শেষ না হবে ততক্ষণে এ আগুন নিভবে না।
সেই ধারণা থেকে রাত আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জাহাজটির পাশ থেকে সরে গেছেন। তবে নির্ধারিত এলাকা কর্টন করে রেখেছে উদ্ধারকারী দলগুলো।
ঝালকাঠি সদর ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, সাগর নন্দিনি-২ জাহাজটির ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কি রয়েছে তা এখনি বলা মুশকিল। তবে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আগুন নিয়ন্ত্রণের।
উল্লেখ্য, ১ জুলাই প্রথম দফায় এ জাহাজে বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন জাহাজের গ্রিজারম্যান আব্দুস সালাম হৃদয়, মাস্টার ইনচার্জ রুহুল আমীন খান, সুপারভাইজার মাসুদুর রহমান বেলাল এবং ড্রাইভার সারোয়ার হোসেন।